১ সেপ্টেম্বর থেকে এই নিয়ম কার্যকর করা হবে
চীনে শিশুদের ভিডিও গেমসের আসক্তি কমানোর জন্য ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য একটি নতুন নিয়মের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার।
সোমবার (৩১ আগস্ট) ওই ঘোষণায় বলে হয়, এক সপ্তাহে শুধুমাত্র তিন ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে পারবে একজন শিশু।
এ সময় গেমিং আসক্তি মোকাবিলার জন্য এই পদক্ষেপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন তারা।
তবে নতুন নিয়মটি কোনো আইন নয় যেখানে নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য শাস্তি দেবে।
চীন কেন গেমিং আসক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন?
বিশ্বের বৃহত্তম ভিডিও গেমস প্রস্তুতকারক দেশটির কর্তৃপক্ষ বছরের পর বছর ধরে তরুণদের মধ্যে গেমিং এবং ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি নিয়ে চিন্তিত। এমনকি চীনে ক্লিনিক স্থাপন করে তথাকথিত “গেমিং ডিসঅর্ডার” রোগীদের জন্য থেরাপি এবং সামরিক মহড়াও দেওয়া হয়।
২০১৮ সালে গেমিংয়ের এই ক্রমবর্ধমান হারকেও উদ্বেগজনক হিসেবে উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা।
ভিডিও গেমের শিরোনাম অনুমোদনকারী নিয়ন্ত্রক সংস্থা “ন্যাশনাল প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন” (এনপিপিএ) সোমবার জানিয়েছে, নতুন নিয়মটি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের প্রতিক্রিয়া। কেননা ভিডিও গেমস শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে।
চীনের শিশুদের মধ্যে ৬২.৫ শতাংশই অনলাইনে গেম খেলে। এবং ১৩.২ শতাংশ অপ্রাপ্ত বয়স্ক মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সপ্তাহে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে গেম খেলে।
এখন পর্যন্ত কী কী করা হয়েছে?
২০১৭ সালে টেনসেন্ট হোল্ডিংস জানিয়েছিল, তাদের ফ্ল্যাগশিপ মোবাইল গেম “অনার্স অফ কিংস”-এর খেলার সময় কিছুটা সীমিত করে দেবে। কেননা অভিভাবক ও শিক্ষকদের অভিযোগ ছিল শিশুরা আসক্ত হয়ে পড়ছে।
এক বছর পর, মায়োপিয়ার (চোখের দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া) ক্রমবর্ধমান হার দেখে, উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষ জানায়, নয় মাসের জন্য ভিডিও গেম অনুমোদন স্থগিত করার সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।
উল্লেখ্য ২০১৯ সালে শিশুদের সপ্তাহে ১.৫ ঘণ্টার কম অনলাইন গেম এবং ছুটির দিনগুলোতে তিন ঘণ্টা খেলার জন্য আইন পাস করেছিল। এর মধ্যে রাত ১০ টা থেকে সকাল ৮টার মধ্যে কোনও গেম খেলার অনুমতি ছিল না।
অন্যদিকে হিসাব করে দেখা যায়, শিশুরা প্রতি মাসে ভার্চুয়াল গেমিং-এর জন্য বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে ২৮ ডলার থেকে ৫৭ ডলার (প্রায় দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা) পর্যন্ত খরচ করছে।
জানা গেছে, অপ্রাপ্তবয়স্কদের ভিডিও গেমস খেলতে লগ ইন করার সময় তাদের আসল নাম এবং জাতীয় শনাক্তকরণ নম্বর ব্যবহার করতে হয়। এক্ষেত্রে “টেনসেন্ট” ও “নেটএইজ”-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো অপ্রাপ্তবয়স্কদের শনাক্তকরণের জন্য সিস্টেম স্থাপন করে রেখেছে।
জুলাই মাসে, টেনসেন্ট “মিডনাইট প্যাট্রোল” নামে একটি ফেস রিকগনিশন ফাংশন চালু করেছে, যা শিশুরা যেন প্রাপ্তবয়স্কদের লগইন ব্যবহার করতে না পারে সেটি রোধে অভিভাবকরা চালু করতে পারেন।
নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলি কী এবং কীভাবে চীন সেগুলো কার্যকর করবে?
নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলোয় ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অনলাইন গেম খেলতে নিষেধ করা হয়েছে, যা আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর করা হবে। এছাড়া, শুক্রবার, শনিবার, রবিবারসহ সরকারি ছুটির দিনে রাত ৮ থেকে ৯ টার মধ্যে শুধুমাত্র এক ঘণ্টা খেলতে পারবে।
অন্যদিকে, অনলাইন গেমিং কোম্পানিগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে যে তারা ব্যবহারকারীর আসল নাম ও পরিচয় যাচাই করে এনপিপিএ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি গেমিং আসক্তি-বিরোধী ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত থাকবে।
এনপিপিএ রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়াকে জানিয়েছে, সময়সীমা লক্ষ্য রাখার জন্য অনলাইন গেমিং কোম্পানিগুলোর ফ্রিকোয়েন্সি এবং তীব্রতা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।
এছাড়া নিয়ম লঙ্ঘন করলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শাস্তি ও জরিমানা করা হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ঘরে বসে অনলাইনে গেমস খেলে সময় কাটাচ্ছে শিশুরা। এতে গেমিং আসক্তি বেড়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ অভিভাবক ও বিশেষজ্ঞদের। এমতাবস্থায় সম্প্রতি জনপ্রিয় দুই ভিডিও গেমস পাবজি ও ফ্রি ফায়ার-এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার।
মতামত দিন