ক্লাবে নিজের অবস্থান নড়বড়ে হলেও সেটি নিয়ে ভাবতে নারাজ বার্সেলোনা কোচ
এই মুহূর্তে লা লিগা পয়েন্ট টেবিলে বার্সেলোনার অবস্থান আটে। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম ম্যাচে ঘরের মাঠে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে। এদিকে, গত সপ্তাহেই ক্লাবের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশার বাণী শুনিয়েছেন রোনাল্ড কোম্যান, কিন্তু এখন তার নিজের অবস্থানই টালমাটাল। রোনাল্ড কোম্যান নিজেও হয়ত বিষয়টি বোঝেন। যদিও জনসমক্ষে এ নিয়ে খুব একটা দুশ্চিন্তা প্রকাশ করতে দেখা যায়নি তাকে।
রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) লা লিগায় লেভান্তের বিপক্ষে ঘরের মাঠে খেলতে নামবে বার্সেলোনা। যদিও কাদিজের বিপক্ষে লাল কার্ড দেখায় নিষেধাজ্ঞা জনিত কারণে ন্যু ক্যাম্পে অনুষ্ঠিতব্য এ ম্যাচে ডাগআউটে দেখা যাবে না এই ডাচকে। কিন্তু ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এসে ঠিকই তিনি বিগত ম্যাচ, ক্লাবের অবস্থা, নিজের ভবিষ্যৎ বিভিন্ন বিষয়েই কথা বলেন তিনি।
গ্রানাডা ও কাদিজের বিপক্ষে গত দুটি ম্যাচে ড্রয়ের মাধ্যমে বার্সেলোনা টানা ৩ ম্যাচ ধরে জয়হীন রয়েছে। তাছাড়া, সর্বশেষ ৫ ম্যাচের মধ্যে কাতালানরা জয় পেয়েছে মাত্র এক ম্যাচেই, তাও সেটি এসেছে গেটাফের বিপক্ষে যারা কি না সবগুলো ম্যাচেই হেরেছে। সেই ম্যাচেই রেফারিং নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করায় লাল কার্ড দেখে বহিষ্কৃত হন তিনি। কাদিজ ম্যাচে নিজের লাল কার্ড প্রসঙ্গে কোম্যান বলেন, "স্পেনে আপনাকে বিনা অপরাধে শাস্তি পেতে হয়।"
স্প্যানিশ গণমাধ্যমে গুঞ্জন, যেকোনো সময়ে বার্সেলোনা কোচের পদ থেকে কোম্যানকে বরখাস্ত করা হতে পারে। এমনকি তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে জাভি হার্নান্দেজ, রবার্তো মার্টিনেজের নামও শোনা যাচ্ছে।
কোম্যানকে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বিষয়টিকে সাধারণভাবেই নেন। কারণ কোচের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের গুঞ্জন নতুন কিছু না।
তিনি বলেন, “আমি এই বিষয় নিয়ে বেশি কিছু বলতে পারি না। কারণ আমি দীর্ঘদিন ধরে খবরের কাগজ পড়িনি। আমি গুজবগুলো শুনেছি, কিন্তু আমাদের একমাত্র কাজ হলো ম্যাচ জেতা। গুজব, নাম ওঠা... এগুলো থাকবেই। যেসব জিনিসের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ নেই সেগুলোকে নিয়ে আমি মাথা ঘামাতে নারাজ।”
শুধু ফলাফল নিয়েই নয়, কোম্যানকে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে বার্সেলোনার বর্তমান প্লেয়িং স্টাইল নিয়েও। চিরাচরিত টিকিটাকার দর্শন ছেড়ে নিজস্ব ভিন্ন ধারার ফুটবল খেলা শুরু করেছেন। প্রথমে কেউ এ নিয়ে আপত্তি তোলেনি। কিন্তু কোম্যান সেই ভিন্ন ধারার কৌশলেও কাতালান ক্লাবটি কাঙ্ক্ষিত ফলাফল বের করে আনতে পারছে না। উদাহরণস্বরূপ গ্রানাডার বিপক্ষে ম্যাচে ৫৪টি ক্রস করেছিল বার্সেলোনার খেলোয়াড়রা। কিন্তু এর অধিকাংশই ছিল উদ্দেশ্যবিহীন এবং নির্বিষ।
খেলার ধরন নিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে কোম্যান বলেন, “আপনি যদি বার্সেলোনার বর্তমান খেলোয়াড়দের তালিকা দেখেন তাহলে আপনি কি করবেন? তাদের নিয়ে টিকিটাকা খেলবেন?”
স্প্যানিশ মিডিয়ার ভাষ্যমতে, বার্সেলোনা প্রেসিডেন্ট হুয়ান লাপোর্তের সঙ্গেও নাকি তার সম্পর্ক ভালো নয়। সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোর পর নাকি দুজনের সম্পর্ক নাকি আরও শীতল হয়েছে। যদিও কোম্যন এসব কথা নাকচ করে দিয়ে বলেন, “সেদিন (কাদিজ ম্যাচের পরে) তেমন কিছুই হয়নি। বিমানে আমরা ম্যাচ বিষয়ক আলোচনা করেছিলাম এবং সেটি সেখানেই শেষ।”
তবে কোম্যানকে বরখাস্ত করলেও রাতারাতি বার্সেলোনার পরিস্থিতি পাল্টে যাবে বলে মনে হয় না। ইতোমধ্যেই ক্লাব ডুবে আছে বড় অঙ্কের দেনার সাগরে। কোম্যানকে বরখাস্ত করলেও এখন ১২ মিলিয়ন ইউরোর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এর আগেও, দুই কোচ আর্নেস্টো ভালভার্দে ও কিকে সেতিয়েনকে বরখাস্ত করে এখনও তাদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করতে পারেনি বার্সেলোনা।
তবে যত সীমাবদ্ধতাই থাক আর নিজের পক্ষে কোম্যান যতই সাফাই গান না কেন, কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না এলে এবং পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটলে ক্লাবে কোম্যানের বিদায় ঘণ্টা বেজে যাবে এটি নিশ্চিতই। আর তিনি নিজেও তা জানেন।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান ও স্প্যানিশ গণমাধ্যম মার্কা অবলম্বনে। অনুবাদ করেছেন- রাফীদ শাদমান
মতামত দিন