শুধুমাত্র বাজার থেকে কেনা দামি প্রসাধনীই যে ত্বক পরিষ্কার রাখার একমাত্র উপায়, তা কিন্তু নয়
সারাদিনের ধুলোময়লা, ঘাম, তেল আমাদের ত্বকের রোমকূপে জমে ত্বকের অনেক ক্ষতি করে। এমনকি, প্রত্যেকদিন ভালোভাবে ত্বক পরিষ্কার না করলে ঘাম, তেল জমে রোমকূপের মুখ বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে ত্বকের মৃত চামড়া কিংবা ডেডসেল রিনিউ ঠিকমতো হয় না। তাই স্বাভাবিক, শুষ্ক বা তৈলাক্ত যে কোনো ধরনের ত্বকের জন্যেই ক্লিঞ্জার এবং স্ক্রাবিং করা খুব জরুরি। স্ত্রাবিং এর মাধ্যমে ত্বকে জমে থাকা মৃত চামড়াগুলো সহজেই রিমুভ হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হার্শ কোনো স্ত্রাবিং ব্যবহার করবেন না। এতে করে ত্বকের আরো বেশি ক্ষতি হতে পারে। আর ত্বককে টানটান রাখতে হলে সঠিক টোনার ব্যবহার করতে হবে । শুধুমাত্র বাজার থেকে কেনা দামি প্রসাধনীই যে ত্বক পরিষ্কার রাখার একমাত্র উপায়, তা কিন্তু নয়। আপনি চাইলে বাড়িতেই বানিয়ে নিতে পারেন ত্বকের নিত্য প্রয়োজনীয় সকল ধরনের প্রসাধনী-
ক্লিঞ্জার:
ডিমের কুসুম ত্বকের কিঞ্জার হিসেবে দারুণ কাজ করে। ডিমের কুসুমে থাকা ক্লিনজিং প্রপার্টিস মুখে জমে থাকা ধুলো ময়লা তেল পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। ডিমের কুসুম ফেটিয়ে মুখে লাগিয়ে, ২০ মিনিট পরে তা ধুয়ে ফেলুন। বেসনও দারুণভাবে ত্বক পরিস্কার করতে সাহায্য করে। সেক্ষেত্রে বেসনের সঙ্গে এক চিমটে হলুদগুঁড়া ও সামান্য দুধ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। এই মিশ্রণটিও ক্লিঞ্জার হিসেবে দারুণ ভাল কাজ করবে। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। মধুও ক্লিঞ্জার হিসেবে দারুণ ভাল কাজ করে। জল দিয়ে ভাল করে মুখ ধুয়ে নিন। হাতের তালুতে ২ চা-চামচ মধু নিন। এর সঙ্গে কয়েকফোঁটা কুসুম-গরম পানি মিশিয়ে মুখে ও গলায় লাগিয়ে নিন। পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে হালকা হাতে ঘষে কুসুম-গরম পানি দিয়ে ভাল করে ধুয়ে ফেলুন। এটি ক্লিঞ্জিং-এর সঙ্গে টোনিং-এরও কাজ করবে।
স্ক্রাবার:
চালেরগুড়া স্ত্রাবার হিসেবে অনেক ভালো কাজ করে, একমুঠ চিনিগুড়া চাল গুড়ো করে বাড়িতেই স্ক্রাবার বানিতে ফেলতে পারেন। প্রতিদিন স্ত্রাবিং করার প্রয়োজন নেই, সপ্তাহে ২দিন স্ত্রাবিং করলেই ত্বকের মৃত চামড়া বা ডেড স্কিন সেল রিমুভ হয়ে যায়। এতে করে ত্বক উজ্জ্বল ও নরম হবে। অবশ্যই এ ক্ষেত্রে খুবই আলতো ভাবে স্ক্রাবিং করতে হবে, বেশি হার্শ ভাবে করলে তা উঠলো ত্বকের ক্ষতি করবে। স্ক্রাবার হিসেবে কফির তুলনা হয়না। তিন-চার চামচ কফি পাউডার অল্প একিটু পানিতে মিশিয়ে স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। মুখের পাশাপাশি গলা ও ঘাড়ে লাগাতে পারেন। এমনকি সারা শরীরেও লাগাতে পারেন মিশ্রণটি লাগানোর পর কিছুক্ষণ হালকা হাতে সার্কুলার মুভমেন্টে ম্যাসাজ করে নিবেন এতে মৃত চামড়া গুলো বেশ ভালোভাবে রিমুভ হয়ে যায়। স্ক্রাবিং ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে, ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
টোনার:
ত্বক মসৃণ, টানটান এবং উজ্জ্বল রাখার জন্য টোনার ব্যবহার করা হয়। এমনকি যেকোনো ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধোয়ার পর আমাদের ত্বক তার স্বাভাবিক পিএইচ স্তর হারিয়ে ফেলে। কারন হচ্ছে ক্লিঞ্জারে থাকা এসিডিক উপকরণ। তাই ত্বকের হারিয়ে যাওয়া পিএইচ স্তর স্বাভাবিক করতে অবশ্যই টোনার ব্যবহার করতে হবে। গোলাপজল একট ন্যাচারাল টোনার, যেকোনো ত্বকে গোলাপজল টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনকি গ্রিন টিও কিন্তু অনেক ভাল প্রাকৃতিক একটি স্কিন টোনার। গরম জলে গ্রিন টি আধঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে, ঠান্ডা হলে ছেঁকে বোতলে ভরে রাখুন। এরসঙ্গে সামান্য গোলাপ জল, গ্লিসারিন, অ্যালোভেরার রস ও এসেনশিয়াল অয়েল (যে কোনও) মেশান। মিশ্রণটি ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন। প্রতিবার মুখ ধোওয়ার পর তুলা কিংবা তালের তালুর সাহায্যে এই টোনার লাগিয়ে খুব হালকা করে মুখ ও গলা ভাল করে মুছে নিন। টোনার নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে, ত্বক টানটান হবে, জেল্লাও বাড়বে। শসার রসও টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। শসা কুচি করে নিয়েও মুখে লাগাতে পারেন। ২০ মিনিট পর পরিস্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলবেন। প্রতিদিন যদি একবার করে লাগাতে পারেন দেখবেন চামড়া টানটান হবে।
ময়েশ্চারাইজার:
অ্যালোভেরার রস ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এর সাথে দুই টেবিলচামচ মধু ভাল করে মিশিয়ে একটি এয়ারটাইট কন্টেনারে ভরে ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করতে পারেন। এই মিশ্রণ দু’ থেকে তিনদিন মতো ফ্রিজে রেখে ব্যবহার করা যাবে। যাঁদের ত্বক খুব শুষ্ক তাঁদের জন্যে এই প্যাকটি খুবই উপকারী। এছাড়া শীতকালেও এই ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারবেন। অ্যালোভেরা ত্বকের ইরিটেশন কমাতেও সাহায্য করে। ত্বক হাইড্রেটেড ও কোমল রাখার জন্যে গ্লিসারিনও ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। দু’টেবল চামচ গোলাপ জলের সঙ্গে এক টেবিল চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে এয়ারটাইট কন্টেনার করে ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করতে পারেন। এতে করে অনেকদিন ভাল থাকবে এই মিশ্রণটি। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে আগে মুখ ভাল করে ধুয়ে নিয়ে সারা মুখে এই লোশনটি লাগিয়ে নিতে পারেন। এবং সকালে উঠে পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নিবেন।
মতামত দিন