একদিকে নিরবতা অন্যদিকে সাগরের ঢেউয়ের প্রচন্ড গর্জন। সেই গর্জন শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হামিদা
হামিদা বেগম। বয়স জানা নেই তার। তবে বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন তিনি। এক ছেলে, দুই মেয়ে তার। স্বামী আব্দুল মান্নান মারা যাওয়ার পর সন্তানরাও ফেলে চলে গেছে। অসহায় হামিদা বেগমের ঠাঁই হয় সাগরপাড়ের ঝাউ বাগানের ঝুঁপড়ি ঘরে।
কক্সবাজার শহরের কবিতা চত্বরের মঞ্চ ঘেষে হামিদা বেগমের ঝুঁপড়ি ঘরটি। সেখানেই যুগ যুগ ধরে একাই বসবাস করে আসছেন হামিদা। দিনের বেলায় পর্যটকসহ নানা মানুষের আনাগোনা থাকলেও রাতের অন্ধকারে নেমে আসে নিরবতা। সেই অন্ধকারের নিরবতায় একাকী কাঁদেন হামিদা।
একদিকে নিরবতা, অন্যদিকে সাগরের ঢেউয়ের প্রচণ্ড গর্জন। সেই গর্জন শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হামিদা। হামিদা বেগমের ঝুঁপড়ি ঘরের ১০ গজের মধ্যে আছড়ে পড়ছে সাগরের প্রবল ঢেউ। বৃদ্ধা হামিদা সেই গর্জনে এখন ভয় পান না। সাগরের সাথে যেন তার নিত্যদিনের মিতালী।
প্রতি বছর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নানা ঘূর্ণিঝড়েও তিনি তার ঝুঁপড়ি ঘরেই থাকেন। তার খবর কেউ নেয় না।
হামিদা বলেন, “মুজিব বর্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর উপহার পাচ্ছে অসহায় ও ভূমিহীন মানুষেরা। কিন্তু, কারা ভূমিহীন জানি না। শেষ বয়সে এসে নতুন করে স্বপ্ন দেখছিলাম মুজিব বর্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের একখন্ড জমি ও ঘর পাব। গত দুই বছর ধরে লকডাউনে খেয়ে না খেয়ে জীবন যায় আমার। কেউ কোনদিন এক মুঠো খাবারও দেয়নি।”
হামিদা বেগম জানান, ১৯৯১ সালে রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ি থেকে কৌতুহলবশত পালিয়ে আসেন কক্সবাজারে। সেই থেকে তিনি রয়ে যান কক্সবাজারে। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর থেকে আর ঢাকায় যাওয়া হয়নি তার। বিয়ে হয় সিলেটের আব্দুল মান্নানের সাথে।
আব্দুল মান্নান কক্সবাজারের শতায়ু পরিষদে অল্প বেতনে পাহারাদার হিসেবে চাকুরিরত অবস্থায় মারা যায়। এরপর মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে হামিদাকে চাকরিটি দিয়েছে শতায়ু পরিষদ কর্তৃপক্ষ। মাত্র তিন হাজার টাকা বেতনে হামিদার সংসার চলে না। মাঝেমধ্যে বের হতে হয় ভিক্ষার থালি নিয়ে।
কক্সবাজার পৌরসভার নাগরিক দাবি করে একটি “জাতীয় পরিচয় পত্র” দেখিয়ে বৃদ্ধা হামিদা বেগম জানান, একের পর এক লকডাউনে এখন ভিক্ষাও কম দয় মানুষ। কক্সবাজার পৌরসভা থেকেও কোন ত্রাণ পাননি তিনি।
হামিদার ভাষ্যমতে, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম আসলে একাধিক ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় সাগরে। ঘূর্ণিঝড় যখন প্রবল আকারে রূপ নেয়, তখনও তিনি সাগরপাড়ে থাকেন। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই তার। এসময় কেউ খবরও নেয় না তার।
সম্প্রতি সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াস প্রবলভাবে রূপ নিলেও সাগরপাড়ের কবিতা চত্বরের ঝুঁপড়ি ঘরেই ছিলেন তিনি। ঝুঁপড়ি ঘরটিই তার আপন ঠিকানা।
মতামত দিন