সঠিকভাবে যত্ন নেওয়া হলে এর মাধ্যমে কক্সবাজারে প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যটনকে আরও আলোড়িত করে তোলা সম্ভব
কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের কাছে একটি শতাব্দী প্রাচীন মসজিদের ধ্বংসস্তূপ আবিষ্কৃত হয়েছে। “ফজলুর রহমান মিয়াজী জামে মসজিদ” নামের মসজিদটি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার অন্তর্গত বাহারছড়া ইউনিয়নের মাঠভাঙ্গা গ্রামে অবস্থিত ।
অভাবনীয় আবিষ্কার
গত বছর ডিসেম্বরের ১১ তারিখে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের (DoA) আঞ্চলিক পরিচালক (চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ) ড. মো. আতাউর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ এবং অন্বেষণের মাধ্যমে এই অভাবনীয় আবিষ্কারটি করেন।
মসজিদটি আবিষ্কার করার পরপরই ড. মো. আতাউর রহমান সচিত্র প্রতিবেদন তৈরি করেন ও ডিওএ (DoA) এর মহাপরিচালকের কাছে জমা দেন।
ঐতিহাসিক পটভূমি
জনশ্রুতি আছে যে এটি মূলত একটি মাটির মসজিদ ছিল। পরে এটি কাঠ দিয়ে নির্মিত হয়েছিল। পরে ফজলুর রহমান মিয়াজী মসজিদটি নির্মাণ করেন। তিনি হজ করতে সৌদি আরব গিয়েছিলেন যেখানে তিনি মারা যান। তাকে সেখানেই সমাহিত করা হয়।
স্থানীয়রা বলছেন যে মসজিদটি ১০০-১৫০ বছর বয়সী। মসজিদটি নির্মাণের বিষয়ে কোনও লিখিত রেকর্ড পাওয়া যায়নি এবং মসজিদটি কখন নির্মিত হয়েছিল তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য
মসজিদটি নির্মাণের জন্য পাথর, সিমেন্ট এবং রড ব্যবহৃত হয়েছে। পাথর, সিমেন্ট ও রড ঝালাইয়ের পর মসজিদের দেয়ালগুলি নির্মিত হয়েছিল। এছাড়াও, মসজিদের জন্য “শিয়ার দেয়াল” ব্যবহার করা হয়েছে যা গত এক শতাব্দীতে খুব বিরল।
পূর্ব-দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে তিনটি চূড়া রয়েছে কোণার দিকে। উত্তর-পূর্ব কোণার দিকের চূড়াটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। কোণার চূড়াগুলো (বড় কাঠামোর সাথে সংযুক্ত একটি ছোট বৃত্তাকার টাওয়ার, যা সাধারণত একটি কর্নারে বা কৌনিকারে থাকে) অষ্টভুজ আকৃতির হয়।
সৌধটি দৈর্ঘ্যে ২৮ ফুট ১০ ইঞ্চি উঁচু কোণার চূড়াগুলো সহ এবং এর প্রস্থ ২২ ফুট ২ ইঞ্চি। মসজিদের অভ্যন্তরের দৈর্ঘ্য ২৩ ফুট ৮ ইঞ্চি ,প্রস্থ ১ ফুট এবং দেয়ালের পুরুত্ব এক ফুট।
মসজিদের দক্ষিণ দিকে দুটি জানালা রয়েছে। উত্তর দিকের প্রাচীরটি নষ্ট হয়ে গেছে এবং ধারণা করা হচ্ছে যে উত্তর দিকে দুটি জানালা ছিল।
একই নকশাসহ মসজিদের অভ্যন্তরে তিনটি “মিহরাব” (মসজিদের একটি মক্কা অভিমুখে ইঙ্গিত করা কামরা ) আছে।
বর্তমান অবস্থা
মসজিদটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। মসজিদের কিছু অংশ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (আরএইচডি) অন্তর্গত, বাকি অংশটি ওয়াক্ফ বা দাতব্য সম্পত্তি হিসেবে নথিভুক্ত আছে।
পূর্ব ও উত্তর দিকের দেয়ালগুলি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। মসজিদের ছাদ নেই। চারটির মধ্যে একটি বেড়ি নষ্ট হয়ে গেছে।
কাঠামোটি ডিওএ এর স্মৃতিসৌধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হলে ভবিষ্যতে এর আকৃতি বা নকশা পরিবর্তিত হবে না। তবে মাটি চলাচল, ভূমিধ্বস ও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের মতো প্রাকৃতিক কারণে সম্ভাব্য পরিবর্তনগুলি দেখা যেতে পারে।
সুপারিশ
স্মৃতিসৌধটি “অনন্য” হিসাবে বর্ণনা করে ড. মো. আতাউর রহমান তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন যে এই কাঠামোটি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার ইতিহাসকে আলোকিত করে। এ কারণেই, কাঠামোটির ঐতিহাসিক তাৎপর্য বিবেচনায় করে পুরাকীর্তি আইন -১৯৬৮ এর অধীনে সুরক্ষিত স্মৃতিস্তম্ভ হিসাবে ঘোষণা করা যেতে পারে।
ড. মো. আতাউর রহমান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, স্মৃতিসৌধটি সংরক্ষণ ও সংস্কার করা হলে ভবিষ্যতে এটির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন যে যদি সঠিকভাবে যত্ন নেওয়া হয় তবে অনেকগুলি প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষ এখানে রয়েছে যার দ্বারা কক্সবাজারে প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যটনকে আরও আলোড়িত করে তোলা সম্ভব।
মতামত দিন