অব্যাহতভাবে সামর্থ্যবানদের সহায়তা পেলে বগুড়ার বাইরে আরও দু-একটি জেলা এমনকি সারাদেশে এই কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব বলে জানান তিনি
করোনাভাইরাস সৃষ্ট মহামারিতে স্থবির জনজীবনে সবচেয়ে বিপদে আছেন প্রান্তিক মানুষ। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমজীবীরা কার্যত বেকার। আয় নেই তাই ঘরে খাবারও নেই। এমন দুঃসময়ে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বগুড়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ওয়াহিদ মঞ্জুর সোহাগ। এই সঙ্কটময় মুহূর্তে তাকে পালন করতে হচ্ছে কিছু পেশাগত দায়িত্ব। পাশাপাশি, সীমাহীন অভাবের কারণে অনাহারে থাকা মানুষের মুখে অন্তত একবেলা খাবার তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
সপ্তাহখানেক আগে নিজের কর্মস্থল বগুড়ার ছিন্নমূল মানুষের জন্য অন্তত একবেলা আহারের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করেন ওয়াহিদ। প্রথমদিকে নিজের অর্থায়নে শুরুর পরিকল্পনা থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ফোনের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ এবং পরিচিতদের সহায়তা চান তিনি। এতে ভালোই সাড়া মেলে। এরপর গত ১৯ এপ্রিল থেকে বগুড়া শহরে শুরু হয় এই দুদক কর্মকর্তা খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম।
২৫ এপ্রিল রমজান শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে দৈনিক দুপুরের খাবার তুলে দিতেন অভাবগ্রস্ত মানুষের মাঝে। আর রমজান শুরুর পর থেকে ইফতারের সময় বের হন তিনি। খাবার বিতরণের সময় ওয়াহিদকে সহায়তা করেন পূর্ব পরিচিত বিনয়, মুক্ত ও আল্পনা নামে তিন স্বেচ্ছাসেবী।
ছবি: সৌজন্য
বিষয়টি নিয়ে ঢাকা ট্রিবিউনের কথা হয় এই দুদক কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি বলেন, “মানুষকে সহায়তা করতে গিয়ে যদি নিজে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হই তবুও কার্যক্রম থেমে যাবে না। মানুষের আর্থিক সহায়তা ও স্বেচ্ছাসেবীদের পরিশ্রমে এটা চলমান থাকবে। ক্ষুধার জ্বালায় পৃথিবী মানবশূন্য হয়ে গেলে আমার বেঁচে থেকে লাভ কী?”
ওয়াহিদ আরও বলেন, “আমি নিজেই সব জায়গায় যাই (বিতরণ করতে)। চাইলে অন্যদের ওপর পুরোপুরি ছেড়ে দিতে পারতাম। কিন্তু সেক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির একটা সম্ভাবনা থাকে।”
সংগৃহীত অর্থ দিয়ে খাবার রান্নার দায়িত্বটা তিনি দিয়েছেন স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টকে। তারা বাজার করে খাবার রান্না করে প্যাকেট করার কাজটি করে।
রান্না করা খাবার নিয়ে স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে ওয়াহিদ ঘুরে বেড়ান পুরো বগুড়া শহর। খুঁজে খুঁজে বের করেন এমন একজন রিকশাওয়ালাকে যিনি হয়ত সারাদিনে এক টাকাও রোজগার করতে পারেননি। অথবা এমন কোনো শারীরিক প্রতিবন্ধী নিঃস্ব মানুষকে যিনি হয়ত চলতে আর বলতে না পেরে ক্ষুধার সঙ্গে যুদ্ধ করছেন সারাদিন।
ছবি: সৌজন্য
জানালেন আরও আশার কথা, “শিগগিরই বগুড়ার বাইরে একটি জেলায় আমাদের কার্যক্রম শুরু হবে।” জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থী মনে করেন অব্যাহতভাবে সামর্থ্যবানদের সহায়তা পেলে বগুড়ার বাইরে আরও দু-একটি জেলা এমনকি সারাদেশে এই কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।
চাইলে আপনিও ওয়াহিদ মঞ্জুরের কার্যক্রমে সহায়তা করতে পারেন। সমাজের সামর্থ্যবানদের ছোট ছোট সহায়তা এই ক্রান্তিলগ্নে বাঁচাবে একেকটি প্রাণ।
অন্তত আগামী ঈদুল ফিতর পর্যন্ত দিনে ১০০ অসহায় মানুষকে একবেলা খাওয়াতে চান ওয়াহিদ। পরিস্থিতি বিবেচনায় কার্যক্রম আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে।
তিনি বলেন, “যদি এই কাজ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়ে মারাও যাই তবে সৃষ্টিকর্তার কাছে জবাবদিহিটুকু করতে পারব।”
এবারই প্রথম নয়, গত ৫ বছর ধরে নিজ শহর গাইবান্ধার অসহায় মানুষকে নিয়মিত বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে আসছেন ওয়াহিদ।
মতামত দিন