মাউশির মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেই এই বুনিয়াদি শিক্ষা দেওয়ার জন্য শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো যায়
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা অনুযায়ী, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইনস্টিটিউট ও বিভাগে স্নাতক পর্যায়ের সব শিক্ষার্থীর জন্য বাংলা/ইংরেজি স্বাক্ষরতা (literacy) ও একটি বঙ্গবিদ্যা কোর্সের পাঠদানের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
এর পক্ষে ইউজিসি জানিয়েছে, স্নাতকের শিক্ষার্থীরা তাদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলা/ইংরেজি নামক একটি করে কোর্স পড়লে, তারা বাংলা/ইংরেজিতে কিছুটা দক্ষ হয়ে উঠবে। কিন্তু মঞ্জুরি কমিশনের এই উদ্যোগটি উচ্চশিক্ষা নীতি ও আদর্শের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কারণ দু-একটি কোর্স পড়িয়ে শিক্ষার্থীদের বাংলা/ইংরেজিতে দক্ষ করে গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
তাছাড়া বাংলা/ইংরেজিতে দক্ষতা বিষয়ক শিক্ষা হলো বুনিয়াদি শিক্ষার অংশ। শিক্ষার্থীরা এই শিক্ষা কালক্রমে একটি শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় ধাপে ধাপে অর্জন করে থাকে। সেজন্য শিক্ষা-দর্শন অনুসরণে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে- এই বুনিয়াদি শিক্ষার কাজটি স্নাতক-পূর্ব শ্রেণিতে সম্পন্ন হয়। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায়ও বাংলা/ইংরেজি স্বাক্ষরতা অথবা বঙ্গবিদ্যা বিষয়ক কোর্স বিদ্যালয় পর্যায়ে পড়ানো হয়। আর এই শিক্ষার দায়িত্ব ন্যস্ত রয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের ওপর।
মঞ্জুরি কমিশন যদি মনে করে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, তারা বাংলা/ইংরেজিতে অথবা বঙ্গবিদ্যা বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞানসম্পন্ন নয়, তবুও এই বুনিয়াদি শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তায় না। এক্ষেত্রে কমিশন বরং এই বুনিয়াদি শিক্ষার ঘাটতির বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে পারে, যেন মাউশির মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেই এই বুনিয়াদি শিক্ষা দেওয়ার জন্য শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো যায়। সে একই কারণে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কোনোমতেই এই বুনিয়াদি শিক্ষার দায়িত্বটা নিজের ঘাড়ে নিতে পারে না।
বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হলে, বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ে চালু বাংলা/ইংরেজি কোর্সের কারিকুলামের বিষয়বস্তু পুনর্বিন্যাস করা প্রয়োজনীয়তাটি আমাদের সামনে আসে।
এ সম্পর্কে আমাদের সামনে জাপানের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণ রয়েছে। সে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুসরণে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা/ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রম পুনর্বিন্যাস করা যেতে পারে। এই পুনর্বিন্যাস অনুযায়ী বাংলা/ইংরেজি কোর্সের বিষয়বস্তু হবে নিম্নরূপ:
- ইংরেজি বিষয়ের কারিকুলামের বিষয়বস্তু: ৪ বছরের জন্য নির্ধারিত সম্পূর্ণ সিলেবাস থেকে বিভাগ সংশ্লিষ্ট শাস্ত্রের টেক্সট বুক থেকে সংগৃহীত গুরুত্বপূর্ণ কনসেপ্ট, টার্ম অ্যান্ড টার্মিনোলজিস।
- বাংলা বিষয়ের কারিক্যুলামের বিষয়বস্তু: চার বছরের জন্য নির্ধারিত সম্পূর্ণ সিলেবাস থেকে বিভাগ সংশ্লিষ্ট শাস্ত্রের পাঠ্যপুস্তক থেকে সংগৃহীত গুরুত্বপূর্ণ শব্দ, ধারণা ও পরিভাষা।
বাংলা/ইংরেজি বিষয়ে দক্ষ সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকরাই উক্ত দু'টি পাঠদানে নিয়োজিত হলে, একই সাথে জ্ঞানীয় প্রবণতা (scholstic apptitue) ও বাংলা/ইংরেজিতে দক্ষতা গড়ে উঠবে। কিন্তু বর্তমানে চালু বাংলা/ইংরেজি কোর্সের মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে না।
উক্ত বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন বিভাগে বর্তমানে চালু বাংলা/ইংরেজি কোর্সের কারিকুলামের বিষয়বস্তু ও তা পাঠদানের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় শিক্ষক নিয়োগ করা হলে, বর্তমান বাংলা/ইংরেজি কোর্সের বিকল্প হিসেবে শাস্ত্র সংশ্লিষ্ট জ্ঞানীয় প্রবণতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভাষা শিক্ষাব্যবস্থা কায়েম হবে।
ড. এ.বি.এম. রেজাউল করিম ফকির
অধ্যাপক, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি
পরিচালক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। প্রকাশিত লেখার জন্য ঢাকা ট্রিবিউন কোনো ধরনের দায় নেবে না।
মতামত দিন