‘আমি তো অদৃশ্য, আমাকে দেখতে পাচ্ছো না’
মানিকগঞ্জে
এক.
উড়ছে রোদ। দৃশ্য ঝুলে আছে আকাশ হতে।
বাইরে বেরুলেই সবদিকে পথ।
খোলা মাঠ প্রান্তর এগিয়ে এলো,
খালটা শুয়ে র’লো মড়ার মতো।
‘কী যেন নেই’-ভাব স্রোতের পিঠে রাত,
রাত্রি এলে—
মুখাগ্নি করে দেবে ছেলেরা, জেলেরা।
অদূরেই ছদ্ম শহর।
হেলে থাকা চাঁদের নিচে
হেঁটে যায় চরিত্ররা
একটি অধ্যায় থেকে অন্য অধ্যায়ে।
একটা পাগল তাই
মাঝরাস্তায় ঢুকে বলে,
‘আমি তো অদৃশ্য, আমাকে দেখতে পাচ্ছো না!’
তার উপর দিয়ে ট্রেন।
তার উপর দিয়ে ডানা
অসংখ্য উড়তে উড়তে এতটাই
ভুলে যাচ্ছিল
ওরা পাখি।
দুই.
এই গ্রাম— ভোর হতে
এখনো অল্প রোদ, নীল আকাশ কিছুটা বাকি।
তবু মানুষের ঘুম ভাঙে, নিচু লয়ে ভাঙে;
সেই ভাঙার শব্দে
সেই ওমের শব্দে
আর যে শিশির ঝরতেছে সেও এক শব্দ
খবরের কাগজ থেকে উঠে আসা খুন-ধর্ষণের চিৎকারেও
জেগে উঠছে মানুষ
বলছে পরস্পর রাত্রিকালীন স্বপ্ন।
আর জাগরণে ডুবে যেতে যেতে—
ওরা ভাত খায়
নিজ হাতে
মানচিত্র এঁকে এঁকে
জগতের ভূমি ও ভূমিকা বাড়ায়।
তিন.
বলকানো দুধের মতো
সাদা ও সাদা মেঘ
ঘন হয়ে কালো হয়ে—রুয়ে দিই বৃষ্টিফোঁটা;
একদিন জন্মাবে সাগর হয়ে।
দাদীমার খোপের ভেতর তাই তিরিশ তিরিশ প্রাণ
রাজহাঁসগুলি—
কার্গো জাহাজ হয়ে
মনে মনে সাঁতরায়
সেইসব সাগরের বুকে।
চার.
এখন শ্যাওলা উঠোন, একটা শামুক লিখতেছে ভ্রমণকাহিনী।
এখন আকাশ, মূহুর্ত লতানো বিদ্যুৎ।
ছনের চালাটি অধিক আকাশ।
হাওয়া, নিভে আসে প্রায় দাদীমার পুরনো কুপি।
এবং একটি খণ্ড মেঘ
বাড়িটির মাথার উপর দুলছে, ঘন, বাদামী ও দৈত্যাকৃতির—
দাদীমা! ঐ দৈত্য
তোমার এই পুরনো কুপির!
পাঁচ.
পাকুড়বৃক্ষ একা, চারদিকে তাকিয়ে আছে কৌশলে।
নিচে গ্রাম বিছিয়ে, আজও কারা গীত গায়
হ্রস ও দীর্ঘ বাক্য বলে
নির্ভুল গঞ্জিকাবাংলা ভাষায়!
দূরে মাগরিব, প্রতি সিজদায়
ইমাম বদলে যায় আয়াতের সুরে।
আর এখানে, নাতিসন্ধ্যায়
খোদার দস্তখত নকল করে—
‘একটাই মুহূর্ত, তারে টেনেটুনে অনন্তকাল...’
বলে সাধু। কিংবা চোর।
লাল চোখ। সূর্যের মতো লাল।
ওরা খণ্ডকালীন ঈশ্বর।
প্রামাণ্য চিত্র
১.
কনকনে মাঘ। ওয়াক্ত: এশা।
বাবা খোদার দিকে যাচ্ছেন।
২.
নাড়াজ্বলা আগ। চারপাশে আমাদের লালচে চেহারা।
“এত টাল! আগুন পোয়াইতে কি শ্যাষম্যাশ দোযখে যামু?”
দাদু কিচ্ছা শোনাবে।
৩.
ওঘরে দাদী। ঘুমের ঘোরে তার হাঁসেদের ডাকে, “তৈ তৈ!”
গত আশ্বিনে। একটা হাঁসের ছাও শেয়ালে নিলো।
গাঢ় ঘুমের ভেতর, দাদী, সেই শেয়ালটাকে খুঁজছে।
৪.
অনন্তে গেঁথে আছে মাঘী চাঁদ—মাথার উপর;
কুহেলিকার গা’য় ঘষা খায় জোছনা, উড়ছে এবং এই নাড়াজ্বলা আগ
চারপাশে আমাদের জ্বলজ্বলে চোখ।
দাদু কিচ্ছা শোনাবে।
৫.
কোথাও বাদুর ঝাপটালো। কোথাও—
নামাজ শেষ। রান্না বাকি।
মা’র দু’হাত ভর্তি দোয়া।
মা ডানকানে কম শুনছেন।
গত ধানের বতরে, এক ধান ছিটকে, তার কানের ভেতর...
৬.
কনকনে মাঘ। ওয়াক্ত: বাদ এশা।
আমাদের উষ্ণতা, খিদে আর খোদা বলতে—
বাবা, ধীরপায়ে হেঁটে হেঁটে
চালতাগাছের নিচে, বাড়ি ফিরছেন।
আমাদের মাথার উপর এসে ঠেকল আরশ।
মতামত দিন