বিজ্ঞানীদের পরিকল্পনা ছিল প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট করোনাভাইরাস থেকে সিকোয়েন্স নিয়ে এগুলো ব্যবহার করে নতুন সিকোয়েন্স বানানো
উহান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা অন্যান্য ভাইরাসের জেনেটিক কোডের সমন্বয়ে নতুন করোনাভাইরাস তৈরির পরিকল্পনা করছিলেন যা প্রকৃতিতে নেই। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম টেলিগ্রাফ এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউএস ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সিতে (ডারপা) এর দাখিল করা এক আবেদন থেকে জানা যায়, একদল বিজ্ঞানী একই ধরনের স্ট্রেনের জেনেটিক তথ্য মিশিয়ে একটি নতুন ভাইরাস তৈরির পরিকল্পনা করছিলেন। যা গত মাসে ফাঁস হয়ে যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় (ডব্লিউএইচও) সঙ্গে কাজ করা একজন জেনেটিক বিশেষজ্ঞ এ তথ্য ফাঁস করেছেন। তিনি প্রস্তাবটির বিস্তারিত যাচাই-বাছাইয়ের পর তিনি এ তথ্য ফাঁস করেন।
তিনি বলেন, “সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটি এভাবে তৈরি করা হলে বোঝা যেত প্রকৃতিতে এর কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যের আর কোনো ভাইরাস কেন পাওয়া যায়নি।”
এখন পর্যন্ত সার্স-কোভ-২ এর সবচেয়ে কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যের প্রাকৃতিক ভাইরাস হচ্ছে ব্যানাল-৫২ নামক একটি স্ট্রেন। যা গত মাসে লাওসে পাওয়া যায়। সার্স-কোভ-২ এর সঙ্গে এর জিনোমের ৯৬.৮% মিল রয়েছে।
মহামারির উৎপত্তি বিশ্লেষণ করা সংস্থা ড্রাসটিক-এর কাছে ফাঁস করা ডারপা প্রস্তাবে দেখা গেছে, বিজ্ঞানীদের পরিকল্পনা ছিল প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট করোনাভাইরাস থেকে সিকোয়েন্স নিয়ে এগুলো ব্যবহার করে নতুন সিকোয়েন্স বানানো। সেই নতুন সিকোয়েন্সে সব স্ট্রেনের বৈশিষ্ট্যই থাকত।
২০১৮ সালে জমা দেওয়া প্রস্তাবে বলা হয়, “আমরা ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত স্ট্রেনগুলির একটি প্যানেল থেকে ডেটা সংকলন করব এবং পূর্ণ দৈর্ঘ্যের জিনোমগুলোর তুলনা করব, অনন্য এসএনপিগুলো স্ক্যান করবো।”
ডব্লিউএইচওর ওই বিশেষজ্ঞ ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, “এর মানে হলো, তারা একই ধরনের করোনাভাইরাসের নানা ধরনের সিকোয়েন্স নিয়ে একটি নতুন সিকোয়েন্স তৈরি করতেন। এটি সম্পূর্ণ নতুন ভাইরাসের সিকোয়েন্স হতো। এর সঙ্গে কোনো স্ট্রেনেরই শতভাগ মিল থাকত না।”
গত বছর উহান ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজির বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, তারা চীনের ইউনান প্রদেশের এক গুহায় ২০১৩ সালে বাদুড়ের বিষ্ঠা থেকে রাটিজি১৩ নামে একটি স্ট্রেনের সন্ধান পেয়েছেন। এই স্ট্রেনের সঙ্গে সার্স-কোভ-২ এর ৯৬.১% মিল রয়েছে। এর অর্থ, নতুন করোনাভাইরাসের সিকোয়েন্স তৈরির জন্য রাটিজি১৩ ব্যবহার করা যেত।
ডব্লিউএইচও সূত্র জানিয়েছে, অন্যান্য বিজ্ঞানীদের সঙ্গে ফাঁস হওয়া বিষয়টি তুলে ধরতে করতে সংগ্রাম করেছিলেন।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডব্লিউএইভওর ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, “রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বিজ্ঞানীরা ভাইরাসটির উৎপত্তির সমস্যা নিয়ে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন।”
মতামত দিন