আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে শিশুরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে বলে মনে করেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা
শীত আসার আগেই লাখ লাখ আফগানদের খাদ্য শেষ হয়ে যেতে পারে। তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণ করা না গেলে অনাহারে দশ লাখের মতো শিশু মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে বলে সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তারা সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ কথা জানা যায়।
আফগান সংকট মোকাবিলায় জেনেভায় আয়োজিত জাতিসংঘের একটি উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস জানান, গত মাসে তালেবানরা আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর থেকে দেশের দারিদ্র্যের হার বেড়েছে এবং সাধারণ সরকারি পরিসেবাগুলো ভেঙে পড়েছে। অতীতে প্রতি বছর যুদ্ধের কারণে লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, "কয়েক দশকের যুদ্ধ, কষ্ট এবং নিরাপত্তাহীনতার পর তারা সম্ভবত সবেচেয়ে ভয়াবহ মুহূর্তের মুখোমুখি হয়েছে।"
তিনি আরও জানান, প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন আফগান জানে না যে তারা তাদের পরবর্তী খাবার কোথায় পাবে কিংবা আদৌ পাবে কি না।
সোমবার বিকেলে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গুতেরেস বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বৈঠকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে ৮,৪৭৮ কোটি টাকারও বেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড আফগানিস্তানে খাদ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠাতে করা নতুন তহবিলে ৫৪৩ কোটি টাকারও বেশি অর্থ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা এইচ ফোর সম্মেলনে বলেন, "প্রায় ১ কোটি ছেলে-মেয়ে বেঁচে থাকার জন্য মানবিক সহায়তার উপর নির্ভর করে। কমপক্ষে ১০ লাখ শিশু এই বছর তীব্র অপুষ্টিতে ভুগে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে পারে।"
তালেবানরা দ্রুততর সময়ে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিলেও অনেক আগে থেকেই খরার পাশাপাশি ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল আফগানিস্তান।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির আশঙ্কা, আফগানিস্তানের ৪০% ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। গমের দাম ২৫% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে সাহায্য সংস্থার নিজস্ব খাদ্য মজুদ শেষ হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট সংঘাতের ফলে সৃষ্ট যন্ত্রণা এবং তালেবানদের ক্ষমতাসীন হওয়ার আশঙ্কায় অনেক আন্তর্জাতিক সাহায্যকর্মী নিরাপত্তাজনিত কারণে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। যারা এখনও রয়ে গেছে তাদেরও কাজ চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
সোমবার সম্মেলনের সময় তাৎক্ষণিক সংকট মোকাবেলার জন্য জাতিসংঘ জরুরি তহবিলে প্রয়োজনের কথা বললেও কেবল অর্থই সংকট নিরসনের জন্যে যথেষ্ট হবে না বলেও স্বীকার করে নেয় তারা। দাতা সংস্থার কর্মীরা যেন নিরাপদে আফগানিস্তানের যে কোনো জায়গায় গিয়ে কাজ করতে পারে, তার নিশ্চয়তা দিতে তালেবানদের ওপর চাপ দিচ্ছে তারা।
কিন্তু তালেবানরা সেই প্রতিশ্রুতি দেওয়ার চেষ্টা করলেও জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট তার বক্তব্যে জানান, তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পর থেকে আফগানিস্তান একটি নতুন এবং বিপজ্জনক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।
তিনি বলেন, "তালেবানরা নারীদের অধিকার বজায় রাখবে এমন আশ্বাসের বিপরীতে গত তিন সপ্তাহে ক্রমাগতভাবে জনসাধারণের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে নারীদের বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।"
দাতা সংস্থার কর্মীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে তালেবানের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতির চেয়েও বেশি কিছু নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
মতামত দিন