হামলাকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
কাবুল বিমানবন্দরে হামলায় নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে বেড়ে ১৭০ জনে পৌঁছেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও ২০০ জন।
যদিও সিবিএস নিউজ এবং দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, আফগান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে একই সংখ্যক হতাহতের খবর দিয়েছে, তবে দ্য টাইমস শুক্রবার (২৭ আগস্ট) দাবি করেছে, এদের ভেতর ১৩ মার্কিন সৈন্যও ছিল।
পেন্টাগন এবং আফগান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, নিহত ১০৩ জনের মধ্যে ৯০ জনই বেসামরিক নাগরিক।
২০১১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ৩০ জন মার্কিন কর্মীর মৃত্যুর পর এটিই আফগানিস্তানে মার্কিন নাগরিক হতাহতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা।
আফগান সাংবাদিকদের দ্বারা ধারণকৃত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানবন্দরের একপ্রান্তে একটি খালের চারপাশে ডজনখানেক মৃতদেহ পড়ে আছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, কমপক্ষে দু’টি বিস্ফোরণে পুরো এলাকা কেঁপে উঠেছিল।
এদিকে, মার্কিন কর্মকর্তারাও আইএসকেই এ ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র অনেক আগেই ২০০১ সালে আফগানিস্তানে আক্রমণ করার মূল কারণ অর্জন করেছিল, আল কায়েদা জঙ্গিদের নির্মূল করতে এবং ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হামলার মতো ঘটনা আর যেন না ঘটে নিশ্চিত করতে।”
ধারণা করা হচ্ছে বাইডেনের এ ধরনের বক্তব্যের কারণেই হামলা চালিয়েছে গোষ্ঠীটি।
বাইডেন বৃহস্পতিবারের বোমা হামলাকারীদের খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, তিনি পেন্টাগনকে আইএসআইএস-কে হামলা করার পরিকল্পনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
হোয়াইট হাউস থেকে টেলিভিশনে বক্তব্য রাখার সময় বাইডেন বলেন, “আমরা ক্ষমা করবো না এবং আমরা ভুলব না। আমরা জড়িতদের ধরবোই, এর শাস্তি পেতেই হবে।”
ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানবন্দরের কাঁটাতারের কাছে খালের মধ্যে লাশ, কয়েকজনের টেনে তোলা হয়েছে এবং স্তূপের মধ্যে প্রিয়জনের লাশ খুঁজে পাওয়ার জন্য সবাই কান্নাকাটি করছে।
বিমানবন্দরে যাচ্ছিলেন তেমন এক আফগান ব্যক্তি জানান, “এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল আমার কানের পর্দা ফেটে গেছে এবং আমি আমার শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেছি। তারপরেই দেখলাম বাতাসে পলিথিনের ব্যাগ যেভাবে উড়ে বেড়ায় সেভাবেই উড়ছে লাশ এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ উড়ছে। আমি লাশ, শরীরের বিভিন্ন অংশ, বয়স্ক এবং আহত পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের দেখেছি। নর্দমার খালে পানি নয় রক্তে বইছিল।”
ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল ফ্র্যাঙ্ক ম্যাকেঞ্জি বলেন, আফগানিস্তানে এখনও প্রায় এক হাজার মার্কিন নাগরিক রয়েছে যাদের ফেরত আনতে যুক্তরাষ্ট্র চাপ দেবে।
ম্যাকেঞ্জি বলেন, মার্কিন কমান্ডাররা ইসলামিক স্টেটের আরও হামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। যার মধ্যে সম্ভবত বিমানবন্দরকে লক্ষ্য করে রকেট বা যানবাহনবাহী বোমাও ছিল। আমরা যা যা করতে পারি তা করছি।
অন্যদিকে, তালেবানের এক মুখপাত্র এই হামলাকে “দুষ্টচক্রের” কাজ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তবে ইসলামিক স্টেটের এই সহিংসতা তালেবানদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। কেননা তারা আফগানদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনবে।
পশ্চিমা দেশগুলো আশঙ্কা, ওসামা বিন লাদেনের আল কায়েদাকে আশ্রয় দিয়েছিল যেই তালেবানরা, তারা আবারও জঙ্গিদের আস্তানায় পরিণত করবে আফগানিস্তানকে। যদিও তালেবান বলছে, তারা দেশটিকে সন্ত্রাসীদের হাতে ছেড়ে দেবে না।
বিমানবন্দরে হুমকি
জুবায়ের নামে ২৪ বছরের একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার জানান, তিনি একসপ্তাহ ধরে বিমানবন্দরে প্রবেশ করার চেষ্টা করছিলেন তার এক চাচাতো ভাইয়ের সাথে। তার ভাইয়ের কাছে যুক্তরাষ্ট্র সফরের অনুমতির কাগজপত্র ছিল যার থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে গেটে বিস্ফোরক নিয়ে আত্মঘাতী হামলাকারী দাঁড়িয়ে ছিল।
বিস্ফোরণের পর গুলি বর্ষণ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পুরুষ, মহিলা এবং শিশুরা চিৎকার করছিল। আমি অনেক আহত মানুষকে দেখলাম ব্যক্তিগত গাড়িতে বোঝাই করে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।"
ওয়াশিংটন এবং তার সহযোগীরা সাধারণ মানুষদের ইসলামিক স্টেটের হুমকির কথা উল্লেখ করে বিমানবন্দর থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে আসছিল।
গত ১২ দিনে পশ্চিমা দেশগুলো প্রায় ১০ লাখ মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে, বাইডেনের নির্দেশ মতো ৩১ আগস্টের মধ্যে সব সেনা প্রত্যাহারের আদেশের পরও হাজার হাজার মানুষ রয়ে যাবে।
বিমান চলাচলের শেষ কয়েকদিন অবশিষ্ট সৈন্যদের নিয়ে যেতে ব্যবহৃত হবে। এরই মধ্যে কানাডা এবং কিছু ইউরোপীয় দেশ কাবুলে বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে।
মতামত দিন