আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সুবিধা রাশিয়া, চীন ও ইরান ভোগ করবে বলে মনে করেন তিনি
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের সিদ্ধান্তকে “নির্বুদ্ধিতা, দুঃখজনক, বিপজ্জনক ও অপ্রয়োজনীয়” বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। নিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে এ কথা বলেন তিনি।
রবিবার (২২ আগস্ট) ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ কথা জানা যায়।
তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পতনের পর নিজের প্রথম আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে টনি ব্লেয়ার বলেন, “চিরস্থায়ী যুদ্ধের অবসানের মতো একটি অযৌক্তিক স্লোগান তুলে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
বিবৃতিতে ব্লেয়ার আরও বলেন, “আমাদের এমনটা করার প্রয়োজন ছিলো না কিন্তু আমরাই এটি বেছে নিয়েছি।”
আরও পড়ুন- মার্কিন সেনারা সহসাই আফগানিস্তান ছাড়ছে না, আভাস বাইডেনের
তার ভাষ্যমতে, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও মিত্রবাহিনীর সেনা প্রত্যাহারের ঘটনা জিহাদি সংগঠনগুলোর জন্য় উল্লাসের উপলক্ষ।
আফগানিস্তানে সেনা অভিযানের সময় যেসব আফগান নানাভাবে যুক্তরাজ্যকে সহায়তা করেছে, তাদের সবাইকে তালেবানের হাত থেকে নিরাপদে সরিয়ে আনার আগ পর্যন্ত দেশটিতে যুক্তরাজ্যের অবস্থানের নৈতিক বাধ্যবাধকতার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
রবিবার দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, শহরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে সাত আফগান নাগরিক নিহত হয়েছে।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে ধারণা টনি ব্লেয়ারের।
আরও পড়ুন- ‘আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল’
নির্বাচনী প্রচারণার সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিলেন, “কোনো মার্কিন নাগরিক যদি দেশে ফিরতে চান, আমরা তাদেরকে ফিরিয়ে আনব।” ওই স্লোগানকে বাস্তবে রূপ দিতেই সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন টনি ব্লেয়ার। বাইডেনের ওই রাজনৈতিক ওই স্লোগানের সমালোচনাও করেন তিনি।
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আফগানিস্তানে নিজেদের ভুলের কথাও স্বীকার করলেও তার দাবি আফগানিস্তানে তাদের হওয়া ভুলের বিপরীতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেগুলো আরও বড় ভুল।
টনি ব্লেয়ারের মতে, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সুবিধা মূলত ভোগ করবে রাশিয়া, চীন ও ইরান। তার আশঙ্কা, গত ২০ বছরে আফগানিস্তান যা যা অর্জন করেছে, বর্তমান পরিস্থিতির কারণে তারা সেসব হারাতে বসেছে।
প্রসঙ্গত, আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যেই আফগানিস্তান থেকে নিজ দেশের সেনাবাহিনীকে পুরোপুরি সরিয়ে নেওয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু পূর্বঘোষিত এ তারিখের পরেও দেশটিতে মার্কিন সেনাবাহিনীর অবস্থানের আভাস দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পর আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালানো হয়। টনি ব্লেয়ার তখন ছিলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে। আফগানিস্তানে পরিচালিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি মিত্রবাহিনীগুলোও অংশ নেয়, যার মধ্যে ছিল যুক্তরাজ্যও।
মতামত দিন