জেটটি এক লাখ একাত্তর হাজার পাউন্ড মালামাল বহন করতে সক্ষম, কিন্তু এর অভ্যন্তরীণ কাঠামো ১৫০ জনেরও কম সৈন্য বহন করার উপযোগী
তালেবানরা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখল করে নেওয়ার পর রবিবার (১৫ আগস্ট) মাত্র ১৫০ জন যাত্রী বহন ক্ষমতার একটি মার্কিন কার্গো জেট বিমান ৬৪০ জন আফগান যাত্রী নিয়ে কাতারের আল-উদেইদ বিমানঘাঁটির উদ্দেশে কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
মূলত তালেবান বাহিনী রাজধানীতে প্রবেশের পর উদ্বিগ্ন আফগান জনগণ এবং কর্মরত মার্কিনীরা কাবুলের বিমানবন্দরে এসে ভিড় করতে থাকে আফগানিস্তান ত্যাগের জন্য।
ইউএস আউটলেট ডিফেন্স ওয়ান কর্তৃকপ্রাপ্ত একটি ছবিতে দেখা গেছে, জেটটিতে ৬৪০ জন আফগান জনগণ বিমানের মেঝেতে বসে আছে। ছবিটি ইতোমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে। জেটটি এক লাখ একাত্তর হাজার পাউন্ড মালামাল বহন করতে সক্ষম, কিন্তু এর অভ্যন্তরীণ কাঠামো ১৫০ জন সৈন্য বহন করার উপযোগী। যুক্তরাষ্ট্রে সি-১৭'র এই ফ্লাইটে ধারণ ক্ষমতার প্রায় চারগুণ অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হয়।
এদিকে সোমবার (১৬ আগস্ট) সি-১৭ এর আরও একটি বিমান আফগান এবং আমেরিকানদের নিয়ে কাবুল ত্যাগ করে। এসময় দেশ ছাড়তে চাওয়া শত শত আফগানকে মরিয়া হয়ে রানওয়েতে ছুটে চলা বিমানের সঙ্গে দৌঁড়াতে দেখা যায়।
ডিফেন্স ওয়ান অনুসারে, প্রায় তিন দশক ধরে মার্কিন এবং তার মিত্রদের পরিচালিত এই বিশাল সামরিক কার্গো সি-১৭ বিমানটিতে এটি সবচেয়ে বেশি লোকের যাত্রা। এত বিশাল সংখ্যক যাত্রী নিয়ে উড্ডয়নের কোন ইচ্ছা ছিলোনা কর্তৃপক্ষের। কিন্তু আতঙ্কিত আফগানরা নিজেদেরকে সি -১৭ এর অর্ধ-খোলা র্যাম্পে গিয়ে জড়ো হয়েছিল।
একজন কর্মকর্তা বলেন, “শরণার্থীরা অনেক মহিলা এবং ছোট শিশুসহ উড্ডয়নের আগে বিমানের অর্ধ -খোলা র্যাম্পে ছুটছিল তাই ক্রুরা তাদের নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।”
একজন মার্কিন প্রতিরক্ষা ডিফেন্স ওয়ানকে জানিয়েছেন, কয়েকটি বিমানে শত শত লোক এক সঙ্গে যাত্রা করেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৪০ জন একটি বিমানে গিয়েছে।
এর আগে ২০১৩ সালে টাইফুন থেকে বাচঁতে সি -১৭ একটি বিমানে ফিলিপাইন থেকে ৬৭০ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, “হাজার হাজার আফগান বিমানবন্দরে বন্যার মতো জড়ো হয়েছিলো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মার্কিন বাহিনী দুই আফগান নাগরিককে গুলি করে হত্যা করে।”
তিনি আরও বলেন, “যখন আপনি কাবুলের বাইরে ছবিগুলি দেখবেন.. যে কারোও জন্য ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন হবে।”
সোমবার সকাল পর্যন্তও মার্কিন বিমানবাহিনী নিশ্চিতভাবে বলতে পারেনি কত জনকে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে এবং কতজনকে সরিয়ে নেওয়া এখনও বাকি। তবে বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় দেড় ঘণ্টা বিমান চলাচল বন্ধ ছিল।
এরপর আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত যানবাহনে করে তালেবানরা বিমানবন্দরের গেটে অবস্থান নিয়েছে বলেও জানা গেছে।
আফগানিস্তান এখন শক্তভাবে তালেবানদের নিয়ন্ত্রণে। মার্কিন বাহিনীর সাহায্য না থাকায় সরকারী বাহিনী ভেঙে পড়েছে।
সর্বশেষ অগ্রগতিতে, আফগানিস্তান থেকে কূটনীতিক এবং বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিতে সামরিক ফ্লাইটগুলি মঙ্গলবার ভোরে পুনরায় চালু করা হয়েছে।
এদিকে সোমবার সকালে এক সাক্ষাৎকারে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে তার নাগরিকদের সরিয়ে আনবে এবং শরণার্থীদের মধ্যে দোভাষী এবং অনুবাদকরাও থাকবে, যারা আমেরিকার সঙ্গে কাজ করেছিলো।”
তিনি বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আফগান বাহিনীকে দোষারোপ করে বলেন, “যখন দরকার ছিলো, তখন তারা যুদ্ধ না করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ২০ বছর পর সেনা প্রত্যাহার যুক্তরাষ্ট্রের হঠাৎ কোনো সিদ্ধান্ত নয়। এটি এমন একটি পদক্ষেপ যা সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়েই নেওয়া হয়েছিল এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার অনুসরণ করেছেন।”
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় দূতাবাসের তিন হাজার বেসামরিক কর্মীকে সরিয়ে নিয়ে আসার কথা বলা হলেও এটা এখনো নিশ্চিত নয় যে, তারা সবাই আফগানিস্থান ত্যাগ করতে পেরেছে কিনা। এই মুহূর্তে ছয় হাজার মার্কিন সেনা কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আছে।
মতামত দিন