স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ৬১৭ দশমিক এক মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা দেশটির আবহাওয়াবিদদের মতে গত এক হাজার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ
চীনের মধ্যাঞ্চলের হেনান প্রদেশে ঝেংঝউ শহরে ভারী বর্ষণ থেকে সৃষ্ট বন্যায় অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাজার বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিতে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড রেল ব্যবস্থা পানিতে ডুবে যাওয়ার ঘটনায় ওই ব্যক্তিদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শহরের ১ কোটির বেশি মানুষ। আহত হয়েছে ৫ জন। বন্যার কারণে একটি বাঁধ ধসে পড়ার আশঙ্কায় হাজার হাজার মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এএফপি ও বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়।
চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে ঝেংঝউ শহর কর্তৃপক্ষ জানায়, টানা বৃষ্টিপাতের কারণে শহরে বন্যা দেখা দেয়। বন্যার পানি ঝেংঝউ মেট্রো স্টেশনে গিয়ে জমে। সেখান থেকে শতাধিক মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের উদ্ধারে কাজ করছে চীনের সেনাবাহিনী।
স্থানীয় সময় শনিবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার (২০ জুলাই) রাত পর্যন্ত ৬১৭ দশমিক এক মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দেশটির আবহাওয়াবিদরা এই বর্ষণকে গত এক হাজার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে, দুইটি বাঁধ ভাঙার খবর মিলেছে, যার একটি হলদে নদীর উপর। এছাড়া, চীনের দুঃখ বলে পরিচিত হোয়াংহো নদীর উপরের বাঁধও ভেঙেছে বলে ধারণা করছে সবাই। ফলে বন্যার পানি আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, ট্রেন যাত্রীরা দাঁড়িয়ে আছেন গলাপানিতে। কেউ কেউ ঝেংঝৌয়ের সাবওয়ের একটি ট্রেনের ভেতর হ্যান্ডরেল ধরে রয়েছেন। আবার অনেকেই জানালার বাইরের টানেলগুলোতে পানি বাড়ার দৃশ্য ভিডিও করছিলেন।
বন্যাক্রান্তদের পাশে থাকার আশ্বাস প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে এবং বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে। এই বন্যায় ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রাণহানি ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মানুষের জীবন এবং সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বন্যার ভয়াবহতায় হেনান প্রদেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। সাবওয়েগুলিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একেকটি সাবওয়ের ভিতর কোমরসমান পানি। বাড়িঘরেও পানি ঢুকে গেছে। বন্ধ রয়েছে বাস ও অন্যান্য যান চলাচল।
চীনের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিপর্যয় মোকাবিলায় হেনান শহরে নদীগুলোর তীরে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। শহরে নদীর পানি প্রবেশ ঠেকাতে তীরে বালুর বস্তা দিয়ে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করছে তারা।
চীনে বর্ষাকালে প্রায় প্রতিবছরই বন্যার দেখা দিলেও বিগত কয়েক দশক ধরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তুলনামুলক বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, দেশটিতে নদীর তীরে ব্যাপক হারে বাঁধ নির্মাণই এর জন্য অনেকাংশে দায়ী।
মতামত দিন