জান্তা নেতা বলেন, মিয়ানমারের স্বাধীনতা অর্জনের পর আদমশুমারিতে ‘বাঙালি’, ‘পাকিস্তানি’ এবং ‘চট্টগ্রাম’ শব্দগুলো নিবন্ধিত করা হয়। কিন্তু ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি কখনও উল্লেখ করা হয়নি
গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করেন মিয়ানমারের জান্তা নেতা মিন অং হ্লাইং। এরপর গণমাধ্যমকে দেওয়া প্রথম সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা কয়েক লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীর মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি।
মিন অং হ্লাইংকে চীনভিত্তিক ফিনিক্স টেলিভিশনে ওই দেওয়া সাক্ষাৎকারে মিন অং হ্লাইংকে জিজ্ঞাসা করা হয়, রোহিঙ্গা মুসলমানরা আবারও রাখাইন রাজ্যে ফিরে যেতে পারবে কিনা, যেখান থেকে ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর গণহত্যার হাত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তারা।
প্রশ্নের জবাবে জান্তা নেতা বলেন, “এটা যদি মিয়ানমারের আইনের সাথে না মেলে, তাহলে আর এখানে বিবেচনার কী আছে? আমি বিশ্বাস করি না পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ আছে যারা নিজ দেশের শরণার্থী আইনের বাইরে গিয়ে শরণার্থীদের গ্রহণ করতে পারে।”
মিন অং হ্লাইং ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গাকে দেশটি ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য করে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে জাতীয়তাবাদীদের দৃষ্টিভঙ্গির পুনরাবৃত্তি করে দেখিয়েছিল যে, রোহিঙ্গারা দেশটির নৃগোষ্ঠীর কোনো অংশ নয়।
হ্লাইং আরও বলেন, আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পর, আদমশুমারিতে “বাঙালি”, “পাকিস্তানি” এবং “চট্টগ্রাম” শব্দগুলো নিবন্ধিত করা হয়। কিন্তু “রোহিঙ্গা” শব্দটি কখনও উল্লেখ করা হয়নি। তাই আমরাও গ্রহণ করিনি। “রোহিঙ্গা” শব্দটি ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই উদ্ভূত হয়েছিল।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সর্বদা রোহিঙ্গা মুসলমানদের “বাঙালি” হিসাবে উল্লেখ করে এসেছে। এটি বোঝাতে যে তারা বাংলাদেশ থেকে আগত। যদিও অনেক রোহিঙ্গাই কয়েক শতাব্দী ধরে মিয়ানমারে তাদের শিকড় শনাক্ত করতে পারে।
গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্ষমতাচ্যুত মিয়ানমারের নির্বাচিত নেতা অং সান সু চিও রোহিঙ্গাদের গণহত্যার অভিযোগে সেনাবাহিনীকে রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন।
তিনি এবং সেনাবাহিনী গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, শরণার্থীরা বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বৈধ অভিযানে লিপ্ত ছিল।
সেনা অভ্যুত্থানের অল্প কিছুদিন পরেই মিন অং হ্লাইং বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানালেও অগ্রগতির কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত জেলাগুলোর বিশাল বিশাল শিবিরে আশ্রয়প্রাপ্ত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পুনরায় ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশও আগ্রহী।
সোমবার ঢাকা ট্রিবিউনের আরেকটি প্রতিবেদনে জানা যায়, চীনের সহায়তায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রত্যাবাসন বিষয়ে আলোচনা পুনরায় শুরু করার চেষ্টা চলছে।
মতামত দিন