মিয়ানমারে জাতিসংঘের দূত ক্রিস্টিন স্ক্রেনার বার্গেনার জানিয়েছেন, ‘দেশটির বিভিন্ন স্থান থেকে ভয়াবহ খবর পাওয়া যাচ্ছে’
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বিক্ষোভে বুধবার (৩ মার্চ) অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছে। একমাস আগে সামরিক অভ্যুত্থান হওয়ার পর এটিকে “সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিন” হিসেবে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ।
মিয়ানমারে জাতিসংঘের দূত ক্রিস্টিন স্ক্রেনার বার্গেনার জানিয়েছেন, দেশটির বিভিন্ন স্থান থেকে ভয়াবহ ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, নিরাপত্তারক্ষীরা বিক্ষোভকারীদের দিকে রাবার বুলেট ছোড়ার পাশাপাশি গুলিও করেছে।
এক প্রতিবেদনে এসব খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার পর মিয়ানমারে গণবিক্ষোভ শুরু হয় মিয়ানমারে। মিয়ানমারে সেনা শাসনের অবসান ঘটিয়ে অং সান সু কি স'হ নির্বাচিত নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করছে মানুষজন।
সামরিক অভ্যুত্থান ওবিক্ষোভ দমন করার উদ্দেশ্যে মিয়ানমার সরকারের নেওয়া সহিংস পদক্ষেপের বিশ্বজুড়ে সমালোচনা হলেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত সব ধরনের সমালোচনা উপেক্ষা করেছে।
বুধবারের মৃত্যুর ঘটনার পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ বৈঠক আহ্বান করেছে যুক্তরাজ্য। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে।
মিয়ানমারে জাতিসংঘের দূত মিজ স্ক্রেনার বার্গেনার জানিয়েছেন, অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন মারা গেছেন এবং 'বহু' আহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, “একটি ভিডিও ক্লিপে পুলিশকে দেখা যায় একজন বিক্ষোভকারীকে গুলি করতে। অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের মতে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে সেগুলো ৯ মিলিমিটার সাব মেশিনগান ধরণের অস্ত্র, অর্থাৎ আসল গুলি ব্যবহার করা হয়েছে বিক্ষোভকারীদের ওপর।”
মিয়ানমারের ভেতর থেকে পাওয়া খবরে জানা যাচ্ছে যে ইয়াঙ্গুনসহ বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর কোন সতর্কবার্তা না দিয়ে সরাসরি গুলি করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
মধ্য মিয়ানমারে মনইওয়া অঞ্চলে অন্তত ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া তথ্যে স্থানীয় একজন সাংবাদিক জানান যে সেখানে আরো অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
তবে সাধারণ মানুষের মৃত্যুর খবরের প্রতিক্রিয়ায় দেশটির সেনাবাহিনী কোন মন্তব্য করেনি। মিয়ানমারের সংকট বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ালেও দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে সামরিক অভ্যুত্থানের পর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় প্রস্তুত তারা।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জেনারেলদের বিরুদ্ধে জাতিসংঘকে “অত্যন্ত কঠোর পদক্ষেপ” নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের দূত মিজ স্ক্রেনার বার্গেনার। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর উপ প্রধানের সাথে আলোচনার সময় এই বিষয়ে কথা বলেন মিজ স্ক্রেনার বার্গেনার।
ঐতিহাসিকভাবে মিয়ানমারের সাথে সুসম্পর্ক থাকা চীনের প্রতিও তিনি বিশেষভাবে আহ্বান জানান যেন তারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সাথে আলোচনা করে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যুত্থানের সমালোচনা করেনি রাশিয়া আর চীনের বিরোধিতার কারণে। চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারের পরিস্থিতিকে তাদের “অভ্যন্তরীণ সমস্যা” হিসেবে আখ্যা দিয়ে আসছে।
মতামত দিন