পাথরের একটি টানেলে আরও ২৫-৩০ জন আটকা পড়েছেন। উদ্ধারকর্মীরা এখনও সেখানে পৌঁছাতে পারেননি। কারণ ওই টানেলে ঢোকার পথ বন্ধ হয়ে গেছে
ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তরাখণ্ডে হিমালয়ের হিমবাহ ধসে বাঁধের ওপর পড়ার ঘটনায় বাঁধ ভেঙে পানি ও কাদার তোড়ে দুটি জলবিদ্যুৎকেন্দ্র বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ১৮ জন নিহত এবং আরও ২০০ জন নিখোঁজ রয়েছে।
উত্তরাখণ্ড রাজ্য সরকার সোমবার (ফেব্রুয়ারি) জানিয়েছ, ঘটনার পর বিভিন্ন স্থান থেকে ১৪টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া আরও ২০০ জন নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজদের মধ্যে ১১ জন গ্রামবাসী এবং বাকীরা দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মী।
উদ্ধার অভিযানে এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের কেউ কেউ বন্যায় এবং কাদা ও পাথরের টানেলের মধ্যে আটকা পড়েছিলেন।
বার্তা সংস্থা এএফপির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, রবিবার একটি টানেল থেকে ১২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছিল। একই রকম আরেকটি টানেলে আরও ২৫-৩০ জন আটকা পড়েছেন।
রাষ্ট্রীয় দুর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তা পিয়ুশ রৌতেলা এএফপিকে জানান, মূল রাস্তা মিশে যাওয়ায় টানেলে প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সেখানে পৌঁছানোর জন্য উদ্ধারকারী প্যারামিলিটারি বাহিনীকে দড়ি ও শাবলের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তবে এখনও সেখানে পৌঁছানো যায়নি।
সোমবার দেশটির জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দল, পর্বতারোহণে বিশেষজ্ঞ সেনাসহ দুই হাজারের অধিক সামরিক, আধাসামরিক ও পুলিশ সদস্য অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছেন। তারা রাতের বেলাতেও কাজ করছেন।
রবিবার সকালে নন্দা দেবী হিমবাহের একটি অংশ ধসে গেলে এর পেছনে আটকে থাকা পানি ছুটে গিয়ে এ বন্যার সৃষ্টি হয়। পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির ধ্বংসলীলা থেকে বাঁচতে অলকানন্দ ও ধউলিগঙ্গা নদীর তীরের অনেক গ্রাম খালি করে ফেলা হয়।
আরও পড়ুন - ভারতে হিমালয়ের হিমবাহ ভেঙে তুষারধস, হতাহত ১৫০ ছাড়ানোর আশঙ্কা
ভিডিওতে দেখা যায়, কর্দমাক্ত ও ধূসর রঙের বানের পানি উপত্যকা দিয়ে গড়িয়ে এসে বাঁধে আঘাত করছে। পরে বাঁধটিকে সহজেই টুকরো করে দিয়ে সেই পানির তোড় নিচে নেমে যায়। এ বন্যার তাণ্ডবে পুরো এলাকা ছাই রঙে ঢেকে যায়।
আধাসামরিক বাহিনী ইন্দো তিব্বতীয় সীমান্ত পুলিশের মুখপাত্র বিবেক পান্ডে জানান, অলকানন্দ নদীর ওপরে থাকা একটি জলবিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস এবং ধউলিগঙ্গা নদীর ওপর নির্মাণাধীন একটি কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হিমালয় পর্বতমালা থেকে নেমে আসা এ দুটি নদী এক হয়ে গঙ্গা নদীর সাথে মিশেছে।
হিমালয় অঞ্চলের নদী ও উপনদীগুলোতে বেশকিছু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী রাওয়াত জানান, কর্তৃপক্ষ সময়মতো ফটক খুলে পানি ছেড়ে দিয়ে ভাটির দিকে থাকা একটি বিদ্যুৎ ইউনিট রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে।
ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ রাইনি গ্রামের বাসিন্দা দীনেশ নেগি বলেন, “পুরো বিষয়টা সকাল ১০টার দিকে শুরু হয়। আমরা দুম করে একটা শব্দ শুনলাম যা আমাদের গ্রাম কাঁপিয়ে দেয়। আমরা বুঝলাম যে খারাপ কিছু একটা হয়েছে। তখনই আমরা নদীর ফুঁসে উঠা দেখতে পেলাম।”
প্রসঙ্গত, ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তরাখণ্ডে হিমালয়ের হিমবাহ ধসে বাঁধের ওপর পড়ায় বাঁধ ভেঙে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়। রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ভোরে বিকট শব্দে ওই হিমবাহটি ভেঙে পড়ে।
দেশটির প্রাক্তন পানিসম্পদমন্ত্রী ও মোদীর দলের প্রবীণ নেতা উমা ভারতী এই অঞ্চলে বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণ নিয়ে তীব্র সমালোচনাও করেছিলেন। কেননা উত্তরাখণ্ড হিমালয়ের বন্যা এবং ভূমিধসের ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত।
এর আগে ২০১৩ সালের জুনে, রেকর্ড বৃষ্টিপাতের ফলে এই এলাকায় ধ্বংসাত্মক বন্যার সৃষ্টি হয়েছিল যাতে প্রায় ৬ হাজার প্রাণহানি হয়েছিল। এই বিপর্যয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে "হিমালয়ে সুনামি" হিসাবে পরিচিত। যার ফলে কাদা ও পাথর ভেঙে পড়েছিল, ঘরবাড়ি মাটিতে বিলীন হয়ে গিয়েছিল এবং ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট ও ব্রিজ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল।
মতামত দিন