বিষয়টিকে ‘ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানোর আকাঙ্ক্ষা’ হিসেবে দেখা হচ্ছে
রাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণ করার পর মিয়ানমারের সামরিক প্রশাসন রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সাথে “যোগাযোগ” করেছে। বিষয়টিকে রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের মাঝে আস্থা তৈরি করতে রাখাইন রাজ্যে সামরিক জান্তার ‘ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানোর আকাঙ্ক্ষা’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইউএনবিকে এক কূটনৈতিক সূত্র বলেন, ‘রাখাইন ও রোহিঙ্গা বিষয়ে সেনাবাহিনীর নতুন পন্থাটি যাই হোক না কেন সেটা একটা রূপ পেতে সময় লাগবে।’
তিনি জানান, ধৈর্য ধরতে এবং মিয়ানমারে ক্রমান্বয়ে কী হচ্ছে তা সতর্কতার সাথে মূল্যায়ন করতে হবে।
কর্মকর্তারা বলছেন, স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য সম্ভাব্য আগ্রহী রোহিঙ্গাদের মাঝে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে আস্থা তৈরি করা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
সেনাবাহিনীর হাতে মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চির পতনের খবর পেয়ে কক্সবাজার শিবিরের রোহিঙ্গারা খুশি হয়ে উঠেন।
তবে ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, ‘এতে আমাদের বিবেচনা আচ্ছন্ন হয়ে গেলে চলবে না এবং বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না যে বর্তমান সামরিক শাসনকে রোহিঙ্গারা পছন্দ করবে।’
তিনি জানান, তাতমাদাও (মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনী) এবং রোহিঙ্গাদের মাঝে কোন্দল রয়েছে।
তবে, সেনাবাহিনী যদি উত্তর ও মধ্য রাখাইনে পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে সেটি কক্সবাজার শিবিরে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের মাঝে ইতিবাচক সংকেত দেবে, বলেন তিনি।
তার মতে, ‘এমন আস্থা তৈরির বিষয়গুলো কমপক্ষে উত্তর রাখাইনে এখনও থাকা রোহিঙ্গাদের আবারও দেশ ছাড়ার সম্ভাব্যতা দূর করবে।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের গত বৃহস্পতিবার একটি বৈঠক করার কথা ছিল কিন্তু মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির কারণে সেটি আর হয়নি।
সামরিক প্রশাসনের ক্ষমতা গ্রহণ করার পর রোহিঙ্গাদের প্রতি তাদের প্রথম ভালো আচরণের খবর বৃহস্পতিবার রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিট্টউয়েতে পাওয়া যায়।
মিয়ানমারের এক সূত্র ইউএনবিকে জানান, রাখাইন রাজ্য বিষয়ক আঞ্চলিক সামরিক অধিনায়ক সিট্টউয়ের অং মিংগ্লার কোয়ার্টারে যান এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের কয়েকজন নেতার সাথে সাক্ষাৎ ও প্রায় ৪৫ মিনিট কথা বলেন।
অং মিংগ্লার কোয়ার্টারটি আঞ্চলিক রাজধানীতে অবস্থিত একটি মহল্লা, যেখানে ২০১২ সাল থেকে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা পড়ে আছেন। ২০১২ সালে রোহিঙ্গাবিরোধী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর মধ্য রাখাইনে অং মিংগ্লার কোয়ার্টারের মতো আরও ১৯টি বিচ্ছিন্ন আইডিপি শিবিরে জীবন টিকিয়ে রেখেছেন রোহিঙ্গারা।
আঞ্চলিক সামরিক অধিনায়ক রোহিঙ্গা মুরব্বিদের কাছে অভ্যুত্থানের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
তিনি মহল্লায় থাকা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। এ সময় রোহিঙ্গা মুরব্বিরা তাদের প্রধান সমস্যা হিসেবে ‘চলাচলে থাকা কঠোর বিধিনিষেধের’ কথা তুলে ধরেন।
আঞ্চলিক সামরিক অধিনায়ক রোহিঙ্গাদের ওপর থাকা বিদ্যমান চলাচলের বিধিনিষেধ সহজ করার আশা দেন।
সেই সাথে তিনি রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে জানান যে সেনাবাহিনী ধাপে ধাপে সব সমস্যা সমাধান করবে। পরে আঞ্চলিক সামরিক অধিনায়ক অং মিংগ্লার কোয়ার্টারের মসজিদের জন্য পাঁচ লাখ এমএমকে (৩৫০ মার্কিন ডলার) এবং কিছু খাদ্য সহায়তা দেন। তিনি ২০১৭ সালের ঘটনার জন্য এনএলডি এবং অং সান সু চিকে দায়ী করেন।
সামরিক অধিনায়ক রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে দেশের আইন মেনে চলার আহ্বান জানান এবং রোহিঙ্গারা এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেন।
‘আমরাও মংডুর উপ-আঞ্চলিক অধিনায়কের একটি মসজিদে একই ধরনের সফর এবং সেখানে রোহিঙ্গাদের সাথে সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতের খবর পেয়েছি,’ আরেক সূত্র বলেন ইউএনবিকে।
সূত্র জানান, এ ধরনের আচরণ রোহিঙ্গাদের প্রতি সামরিক বাহিনীর সম্ভাব্য ‘নরম’ হওয়া ইঙ্গিত করে কি না তা নিয়ে মন্তব্য করার সময় এখনই আসেনি। তবে এটি ঠিকভাবে রোহিঙ্গাদের আস্থা বাড়িয়ে তুলতে এবং রাখাইনে মিটমাট অর্জনেও সাহায্য করবে।
ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, সামরিক বাহিনীও হয়ত তাদের রাখাইনে হারানো ভাবমূর্তির অংশবিশেষ উদ্ধার করতে চায় এবং সম্ভবত দেখাতে চায় যে এনএলডি যা পারেনি তা তারা করতে পারবে।
মতামত দিন