তবে পুরুষের যৌনক্ষমতা প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে ভাইরাসটির ভূমিকা মারাত্মক কি না সেটি এখনো পরিষ্কার নয়
করোনাভাইরাস পুরুষের শুক্রাণুকে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রজনন ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। এমনকি এ ভাইরাসটির সংক্রমণ প্রজনন হরমোনের ব্যাঘাত ঘটিয়ে শুক্রাণুর কোষ বৃদ্ধিকে দুর্বল করে দিতে পারে। শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) জার্নাল রিপ্রোডাকশনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে একথা বলেন গবেষকরা।
তবে অন্যান্য বিশেষজ্ঞগণ জার্নালের দাবির সাথে পুরোপুরি একমত নন। তাদের মতে পুরুষ জননতন্ত্রে ভাইরাসটির বিধ্বংসী ক্ষমতা এখনো পুরোপুরি প্রমাণিত নয়। তবে পুরুষের যৌনক্ষমতা প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে ভাইরাসটির ভূমিকা মারাত্মক কি না সেটি এখনো পরিষ্কার নয়।
জার্মানির জেস্টাস লিবিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেহজাদ হাজিজাদেহ মালেকী এবং বখতেয়ার টারটিবিয়ান পুরুষের উর্বরতার উপর করোনাভাইরাসের প্রভাব বিষয়ে গবেষণা করেছেন।
গবেষণায় দীর্ঘ ৬০ দিনে ১০ দিন নিয়মিত বিরতিক্রমে কোভিড আক্রান্ত ৮৪ জন এবং ১০৫ জন সুস্থ মানুষের শারীরিক অবস্থা বিশ্লেষণ করা হয়।
গবেষকগণের সতর্কবার্তা
‘’শুক্রাণুর এই পরিবর্তন নিম্নমানের শুক্রাণু উৎপাদনের কারণ হতে পারে।‘’- এক বক্তব্যে দাবি করেন মালেকী।
‘’যদিও সুস্থ মানুষের শরীরে এই ধরনের প্রভাব ক্ষণস্থায়ী কিন্ত কোভিড ১৯ আক্রান্ত ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক স্থায়িত্ব এবং প্রকটতা লক্ষ্য করা গেছে। রোগের প্রকটতা যত বেশি বন্ধ্যাত্ব ঘটানোর সম্ভবনাও তত বেশি।‘’– তিনি যোগ করেন।
এ গবেষণায় অংশ না নেয়া বিশেষজ্ঞগণ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে তারা ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হবার লক্ষ্যে আরো বিস্তারিত গবেষণা চালানোর বিষয়ে মতামত প্রদান করেছেন।
বার্লিন কেয়ার ফার্টিলিটি গ্রুপের ভ্রুণবিদ্যা বিভাগের পরিচালক এলিসন ক্যাম্পবেল মনে করেন, পুরুষদের অকারণে আতংকিত হবার প্রয়োজন নেই।
লন্ডন ভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়া সেন্টারকে দেয়া সাক্ষাতকারে এলিসন বলেন, ’’এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী শুক্রাণু বা পুরুষ প্রজননতন্ত্রে কোভিড ১৯ কোন স্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে না।‘’
তার মতে গবেষণার ফলাফলে কিছুটা ভুল থাকতে পারে। কোভিড আক্রান্ত ব্যাক্তিদের কোর্টিকো স্টেরয়েড এবং এন্টিভাইরাল থেরাপি দেয়া হয়। কিন্ত গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে এর ব্যাতায় ঘটেছে। ফলে ঔষধের সাময়িক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে এমনটি হতে পারে।
শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জননতন্ত্র বিষয়ক মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ এলেন প্যাচে গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জোর আপত্তি উত্থাপন করেছেন।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের শুক্রাণু কম উৎপাদনের পেছনে শুধুমাত্র কোভিড ১৯ কে দায়ী করাটা একচোখা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। কারণ অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই ছিলেন স্থুলস্বাস্থ্যের অধিকারী।
‘’একটি দল বেশি মাত্রায় অসুস্থ ছিলেন। অসুস্থতা যাই হোক না কেন, এক্ষেত্রে শুক্রাণু উৎপাদনে প্রভাব পড়াটা স্বাভাবিক’’ - তিনি যোগ করেন।
‘’এটা সর্বজন বিদিত যে জ্বর বা সমগোত্রীয় অসুস্থতায় শুক্রাণুর উৎপাদন ব্যাহত হয়ে থাকে। এক্কখেত্রে কোভিড ১৯ দায়ী সেটি নিশ্চিতভাবে ধরে নেয়ার সুযোগ নেই।‘’- তিনি মন্তব্য করেন।
মতামত দিন