নির্বাচনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা ও রাখাইন জাতিগোষ্ঠীকে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়ায় তাদের রাজনৈতিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে উল্লেখ করে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ
সুদীর্ঘ ৫০ বছরের সামরিক শাসনের পর মিয়ানমারে দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ রবিবার (৮ নভেম্বর)৷ আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটা অনেকটাই “নিয়ম রক্ষার” নির্বাচন হতে যাচ্ছে৷ জার্মান সংবাদসংস্থা ডয়চে ভেলে জানিয়েছে মিয়ানমার নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য।
রাখাইনে ভোট হবে না
এবারের নির্বাচনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা ও রাখাইন জাতিগোষ্ঠীকে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়ায় তাদের রাজনৈতিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে উল্লেখ করে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে রাখাইন রাজ্যসহ ৫৬টি শহরে নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে না৷
ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ
রাখাইন ও চীন রাজ্যের আটটি শহরে ইন্টারনেট সংযোগ এরইমধ্যে বন্ধ রাখা হয়েছে৷ ফলে কেবল নির্বাচন নয়, করোনাভাইরাস নিয়ে তথ্য পাওয়ার সুযোগও সীমিত হয়ে গিয়েছে এসব এলাকায়৷ ২০১৯ সালের ২১ জুন সরকার রাখাইন স্টেটের আটটি টাউনশিপে ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যাপারে বিধি-নিষেধ আরোপ করে যা এখনও বহাল রয়েছে৷
ছাত্র আন্দোলন দমন
এবারের নির্বাচনে মোট নিবন্ধিত ভোটার সংখ্যা তিন কোটি ৭০ লাখ৷ এরমধ্যে ৫০ লাখ তরুণ ভোটার৷ ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি এনএলডি সরকার সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত ছাত্র আন্দোলন দমাতে শক্তি প্রয়োগ করেছিল৷ ফলে, অল বার্মা ফেডারেশন স্টুডেন্টস ইউনিয়ন আসন্ন নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছে৷
বিরোধীদের গ্রেফতার
সরকার তথা সেনাবাহিনী-বিরোধী বক্তব্যের জন্য অনেক বিরোধীদলীয় সমর্থককে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে৷
নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন
নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যম টেলিভিশন ও বেতারে তাদের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে৷ তবে তাদের বক্তব্য আগে নির্বাচন কমিশন থেকে অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে৷
সেনা শাসন
১৯৬২ সালে এক সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী তৎকালীন বার্মার ক্ষমতা দখল করে৷ এরপর ১৯৯০ সালের ২৭ মে সামরিক শাসকদের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়৷ সেই নির্বাচনে সুচির দল জয়লাভ করেছিল৷ কিন্তু সামরিক জান্তা সে ফলাফল অস্বীকার করে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে “স্টেট পিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল” গঠন করে ২০১১ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করে৷
২০১০ সালে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা
দীর্ঘ ৫০ বছর সামরিক শাসনের পর ২০১০ সালে গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে শুরু করে দেশটি৷ গৃহবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পান শান্তিতে নোবেল জয়ী গণতন্ত্রীপন্থি নেত্রী অং সান সুচি৷
২০১৫ সালের নির্বাচন
ওই নির্বাচনে বড় জয় পায় সু চি’র দল এনএলডি৷ কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমালোচনার ঝড় ওঠে সু চি’র বিরুদ্ধে৷ আন্তর্জাতিক আদালতে তার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে৷ ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে অন্তত সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান৷
মিয়ানমারের সংবিধান
সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এমন নির্বাচন আয়োজনের পথে প্রধান অন্তরায় হচ্ছে মিয়ানমারের সংবিধান৷ এটি অগণতান্ত্রিকও বটে৷ শুধু ৭৫% আসন পূর্ণ হয় জনগণের ভোটে, বাকি আসন শুধু মনোনয়ন৷ ২০০৮ সালে এই সংবিধান গ্রহণ করা হয়৷ সংবিধানের আলোকেই ২০১৫ সালে সাধারণ নির্বাচন হয়েছিল৷ সংবিধানে এমনসব শর্ত যুক্ত করা হয়েছে, যাতে অং সান সুচি কোনোদিনই প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না৷
মতামত দিন