তাদের তৈরি ওষুধ করোনা ঠেকাতে ১০০% সফল বলে দাবি করেই বাজারে প্রথম করোনা কিট নিয়ে আসে রামদেবের পতঞ্জলি
ভুয়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ওষুধ বিক্রির অভিযোগে একাধিক মামলা হয়েছে ভারতীয় ধর্মগুরু বাবা রামদেবের প্রতিষ্ঠান পতঞ্জলির বিরুদ্ধে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও ভর্ৎসনা করেছে এমন কর্মকাণ্ডের। এত কিছুর পরেও তাদের বিক্রি বন্ধ হয়নি। বরং চলমান পরিস্থিতিতে গত চারমাসে শুধুমাত্র “করোনিল কিট” বিক্রি করেই প্রায় ২৫০ কোটি ভারতীয় রুপি আয় করেছে পতঞ্জলি।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৩ জুন প্রথমবারের মতো করোনিল কিট বাজারে আনে পতঞ্জলি। “করোনিল” এবং “শ্বাসারি বটি” নামের দুই ধরনের ট্যাবলেট এবং “অণু তৈল” নামের ২০ মিলিলিটারের একটি তেলের শিশি নিয়ে তৈরি ওই কিটের দাম রাখা হয় ৫৪৫ টাকা। চাইলে আলাদাভাবে ট্যাবলেট এবং তেল কেনা যাবে বলেও জানানো হয়।
১৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২৩ লাখ ৫৪ হাজার করোনিল কিট বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছে পতঞ্জলি।
এছাড়াও, আলাদাভাবে ওই তিনটি সামগ্রীর ৬২ লাখ ইউনিট তারা বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছে পতঞ্জলি।
পতঞ্জলির ওয়েবসাইটে উল্লেখিত মূল্য তালিকা অনুযায়ী, আলাদাভাবে শ্বাসারি বটি বিক্রি করে ২৭ কোটি ৯৮ লাখ রুপি আয় করেছে তারা। অণু তৈল বিক্রি করে আয় হয়েছে ৪ কোটি ৬২ লাখ রুপি। করোনিল ট্যাবলেট বিক্রি হয়েছে ৮০ কোটি ৫২ লাখ রুপির। আর তিনটি সামগ্রী মিলিয়ে তৈরি করোনিল কিট বিক্রি করে আয় হয়েছে ১২৮ কোটি ২৯ লাখ রুপির। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ২৪১ কোটি ৪১ লক্ষ রুপি আয় করেছে তারা।
উল্লেখ্য, বাজারে আসার পর থেকেই করোনিল নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। তবুও মানুষ তাদের ওপর বিশ্বাস রেখেছেন বলে দাবি করেছেন পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের সিইও আচার্য বালকৃষ্ণ। বর্তমানে পতঞ্জলি ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার করোনিল কিট তৈরি করছে বলেও জানান তিনি।
কোভিড-১৯ প্রতিহত করতে করোনিল কতটা কার্যকরি, খুব শিগগিরই সেই সংক্রান্ত বিস্তারিত নথিপত্র তারা কেন্দ্রীয় সরকারের “আয়ুষ টাস্কফোর্সের” কাছে জমা দেবেন বলেও জানান বালকৃষ্ণ।
তাদের তৈরি ওষুধ করোনা ঠেকাতে ১০০% সফল বলে দাবি করেই বাজারে প্রথম করোনা কিট নিয়ে আসে পতঞ্জলি। সেইসময় তারা জানায়, করোনিল এবং শ্বাসরি নামে দু’টি ওষুধ বাজারে ছেড়েছে তারা এবং এই ওষুধ ৭ দিনে করোনা সারাতে ১০০% সফল। তাদের তৈরি করোনিলের প্রয়োগে কোভিড আক্রান্তরা ইতিমধ্যে সেরেও উঠছেন। পতঞ্জলির এই দাবি শোরগোল ফেলে দেয় পুরো ভারতে। যার পরিপ্রেক্ষিতে দেরি না করে ওই ওষুধ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পতঞ্জলিকে নোটিশ পাঠায় দেশটির সরকার। সেইসঙ্গে ওই ওষুধ সংক্রান্ত সব ধরনের বিজ্ঞাপন বন্ধেরও নির্দেশ দেওয়া হয়।
পরিস্থিতি বেসামাল দেখে তখন পতঞ্জলি দাবি করে, ‘‘আমরা কখনওই বলিনি এই ওষুধটি করোনা সারাতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বলেছিলাম, আমরা ওষুধ তৈরি করে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করেছি। তাতে করোনা রোগীরা সেরে উঠেছেন। এতে কোনো জটিলতা নেই।’’
এরপর করোনা কিটের নাম পরিবর্তন করে করোনিল কিট রাখে তারা। রামদেব নিজে সাফাই দিয়ে জানান, করোনিল এবং শ্বাসারি কোভিড নিরাময় করবে না, তবে রোগ মোকাবিলায় ব্যবহার করা যেতে পারে।
মতামত দিন