দিল্লির সহিংসতাকে ফ্যাসিবাদী বনাম ফ্যাসিবাদ বিরোধীদের যুদ্ধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্রখ্যাত এই লেখক
ভারতীয় লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট অরুন্ধতী রায় বলেছেন, দিল্লিতে গতসপ্তাহে ঘটে যাওয়া সহিংসতার জন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর “ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা”-ই একমাত্র দায়ী।
ভারতীয় গণমাধ্যম স্ক্রলডটইন-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে বিষয়টির কঠোর সমালোচনা করে তিনি লিখেছেন, “গণতন্ত্র যখন সংবিধান দ্বারা পরিচালিত হয় না এবং প্রতিষ্ঠানগুলো যখন নামসর্বস্ব (ফাঁপা) প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় তখন রাষ্ট্র আবির্ভূত হয় তার জনগণের ওপর আধিপত্যবাদী শক্তি হিসেবে। আপনি সংবিধানের সঙ্গে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে সম্মত অথবা অসম্মত হতেই পারেন- কিন্তু এই সরকার গণতন্ত্রকে পুরোপুরিভাবে নগ্ন করে দিয়েছে। বিশেষ করে এই বিষয়ে। এটা হলো করোনাভাইরাসের আমাদের (ভারতীয়) সংস্করণ।”
দিল্লির সহিংসতাকে ফ্যাসিবাদী বনাম ফ্যাসিবাদ বিরোধীদের যুদ্ধ উল্লেখ করে অরুন্ধতী রায় লেখেন, “এই ঘটনা ফ্যাসিবাদী বনাম ফ্যাসিবাদ বিরোধীদের চলমান যুদ্ধের একটি বহিঃপ্রকাশ। যেখানে মুসলিমরা হলো ফ্যাসিবাদীদের ‘শত্রু’র তালিকায় প্রথম। এই ঘটনাকে ‘দাঙ্গা’ কিংবা ‘বাম বনাম ডান’ অথবা ‘ঠিক বনাম ভুল’ যে যেভাবেই আখ্যায়িত করুক না কেন, বিষয়টি বিপজ্জনক ও বিভ্রান্তিকর।”
দিল্লিতে অনুরাগ ঠাকুর, কপিল মিশ্রা ও পারভেশ ভার্মাদের মতো যেসব বিজেপি নেতা মানুষকে উস্কে দিয়েছেন তাদেরকে “বিশ্বাসঘাতক” বলে উল্লেখ করেছেন অরুন্ধতী।
ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে অরুন্ধতী লিখেছেন, “এনপিআর-এনআরসি-সিএএ'র একমাত্র উদ্দেশ্যই হলো মানুষকে বিভাজিত করা, শুধুমাত্র ভারতেই নয় পুরো উপমহাদেশজুড়ে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যাদের বাংলাদেশি ‘উইপোকা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন, তাদেরকে ডিটেনশন সেন্টারে রাখা কিংবা দেশচ্যূত করা যেতে পারে না। এই পদ্ধতির অবলম্বন এবং এহেন হাস্যকর, নারকীয় চিন্তাধারার মাধ্যমে এই সরকার মূলতঃ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে বসবাসরত কোটি কোটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এই সরকার ওইসব মানুষের জন্য চিন্তিত বলে দাবি করলেও আসলে দিল্লির ঘটনা তাদেরকে বিপদে ফেলতে পারে।”
নিবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই বিজেপি নেতাদের পাল্টা আক্রমণের শিকার হয়েছেন অরুন্ধতী।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সিএএ-বিরোধী ও সিএএ-পন্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরদিন সেই সহিংসতা পূর্ব দিল্লিতেও ছড়িয়ে পড়ে। ওই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪৬ জন মানুষ, আহত হয়েছেন কয়েক শ'।
মতামত দিন