গত বছর রাখাইনে মায়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো অভিযানে হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত পেয়েছে বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন।
মায়ানমারের উপর রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ব্যর্থ হওয়ায় বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা চিন্তা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় মায়ানমারের শুল্কমুক্ত সুবিধা কেড়ে নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন ইইউ এর তিন কর্মকর্তা।
গত বছর রাখাইনে মায়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো অভিযানে হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত পেয়েছে বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন। এই সেনা অভিযানকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ হিসেবে অভিহিত করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ রাখাইনের সহিংসতাকে জাতিগত নিধন হিসেবে আখ্যা দেয়।
এরপর ইইউ এর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকে মায়ানমারের সঙ্গে সব ধরনের সামরিক সহযোগিতা তারা পুনর্মূল্যায়ন করবেন বলে মত দেন বৈঠকে অংশগ্রহণকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। এসময় তারা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মারাত্মক ও কৌশলগত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
তবে আগস্টে জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশের পর পুনরায় রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে নড়েচড়ে বসে সমগ্র বিশ্ব। ঐ প্রতিবেদনে মায়ানমার সেনাবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে বলে সরাসরি অভিযোগ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র মায়ানমারের দুটি মিলিটারি ইউনিটের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
এমন সব সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে চাপ সৃষ্টি হয় ইইউ এর উপর। এ বিষয়ে ইইউ এর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা জনগণের ওপর প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। কিন্তু জাতিসংঘের প্রতিবেদনকে আমরা অগ্রাহ্য করতে পারি না। তারা একে গণহত্যা বলে রায় দিয়েছে’।
যার প্রেক্ষিতে এবার মায়ানমারের উপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা জারি করার কথা ভাবছে ইউরোপীয় কমিশন। উল্লেখ্য, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ঝুঁকির মধ্যে পড়বে মায়ানমারের বস্ত্রশিল্প। তবে, যদি ছয় মাসের পর্যালোচনাকালীন সময়ে মায়ানমার মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক লক্ষ্য পূরণ করতে পারে তবে ইইউ তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনও করতে পারে।
ইতোমধ্যে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তার ওপরে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি এবং তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে ইইউ। তবে মায়ানমারের সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়নি তারা।
তবে, এ প্রসঙ্গে মায়ানামার সরকারের মুখপাত্র জাও তায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, মায়ানমার সেনাবাহিনীর চালনো অভিযানে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে প্রায় ৭ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে তারা বাংলাদেশে স্থাপিত রহিওঙ্গা রিফিউজি ক্যাম্পে অবস্থান করছেন।
মতামত দিন