অধিকাংশ রোগী জানেনই না তারা এই রোগে আক্রান্ত, যা সাগর তলদেশে আইসবার্গের অদৃশ্য নিমজ্জিত অবস্থার মতোই ভয়ংকর
উচ্চরক্তচাপ রোগটিকে মেডিকেল পরিভাষায় হাইপারটেনশন বলা হয়। এই ভয়ংকর রোগটি “আইসবার্গ ডিজিজ” নামেও পরিচিত। কারণ অধিকাংশ রোগী জানেনই না তারা এই রোগে আক্রান্ত, যা সাগর তলদেশে আইসবার্গের অদৃশ্য নিমজ্জিত অবস্থার মতোই ভয়ংকর। গবেষণায় দেখা যায়, ৪২% রোগী জানেনই না তারা এই রোগে আক্রান্ত। ২৪% জানেন কিন্তু তারা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেন না। আর মাত্র ৩৪% রোগী রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেন।
কেন এই রোগটি ভয়ংকর?
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না রাখলে রোগীর গুরুতর অবস্থা হতে পারে। যেমন-
- স্ট্রোক (মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ)
- অন্ধত্ব (হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি)
- হার্ট এ্যাটাক (করোনারি আর্টারি ডিজিস)
- কিডনির অসুখ (ক্রনিক কিডনি ডিজিস) ইত্যাদি
উচ্চরক্তচাপ কখন বলা হবে?
যদি ১৪০/৯০ এর ওপর কারও প্রেশার থাকে, তখন সেটাকে উচ্চরক্তচাপ বলা যাবে। (এখানে সিস্টোলিক প্রেশার হচ্ছে ১৪০ মি.মি.মার্কারি, আর ডায়াস্টোলিক হচ্ছে ৯০ মি.মি.মার্কারি।)
তবে, নিশ্চিত করার আগে খেয়াল রাখতে হবে যে এই রক্তচাপ কয়েকদিন ধরেই এরকম উচ্চ পর্যায়ে আছে কি-না; প্রেশার মাপার আগে তিনি অন্তত ৩০ মিনিট ধরে দৌড়ঝাঁপ করেছেন কিনা; প্রেশার মাপার আগে ধূমপান করেছেন কি-না ইত্যাদি।
একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে, অনেকের ডাক্তারের কাছে গেলে প্রেশার বেড়ে যায়, সেটাকে “হোয়াইট কোট হাইপারটেনশন” বলে!
উচ্চরক্তচাপকে ৩টি গ্রেডে ভাগ করা যায়:
গ্রেড ১: সিস্টোলিক ১৪০-১৫৯, ডায়াস্টোলিক ৯০-৯৯
গ্রেড ২: সিস্টোলিক ১৬০-১৭৯, ডায়াস্টোলিক ১০০-১০৯
গ্রেড ৩: সিস্টোলিক ≥ ১৮০, ডায়াস্টোলিক ≥ ১১০
উচ্চরক্তচাপের কারণ কী?
সাধারণত ৯৫% ক্ষেত্রেই কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। সেটা মেডিকেল পরিভাষায় “এসেনশিয়াল হাইপারটেনশন” নামে পরিচিত। এছাড়া যেসব কারণ উচ্চরক্তচাপের সাথে সম্পর্কিত:
- মদ্যপান
- স্থূলতা
- গর্ভকালীন অবস্থা
- কিডনির রোগ
- বিভিন্ন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
- স্টেরয়েড, জন্ম নিয়ন্ত্রক বড়ি ইত্যাদি ওষুধ সেবন ইত্যাদি
চিকিৎসা
চিকিৎসক রোগীর সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে নির্দিষ্ট ধরনের ওষুধ দেবেন যা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বন্ধ করা যাবে না। এছাড়াও মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম:
- অতিরিক্ত লবণ খাওয়া যাবে না
- নিয়মিত ব্যায়াম করে ঘাম ঝরাতে হবে
- রাতে অন্তত ৭ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে
- ওজন বেশি থাকলে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, ইত্যাদি
পরিশেষে, এসব ব্যাপারে সঠিক দিকনির্দেশনা একমাত্র একজন রেজিস্টার্ড এমবিবিএস চিকিৎসকই আপনাকে দিতে পারেন। তাই ঝুঁকি এড়াতে নিয়মিত আপনার রক্তচাপ পরীক্ষা করুন।
ডা. মুহম্মদ মুহিদুল ইসলাম (এমবিবিএস)
মেডিকেল অফিসার, বায়োমেড ডায়াগনস্টিক এন্ড রিসার্চ ল্যাবরেটরি
মতামত দিন