কারাগারে নিয়ে যাবার আগে আটক সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম তার আট বছরের মেয়েকে ফোনে শুধুমাত্র এই কথাগুলোই বলতে পেরেছিলেন
“চিন্তা কোরো না, আমি দুদিনের মধ্যেই ফিরে আসব। ততদিন তুমি নানা-নানুর সাথে থেকো।” কারাগারে নিয়ে যাবার আগে আটক সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম তার আট বছরের মেয়েকে ফোনে শুধুমাত্র এই কথাগুলোই বলতে পেরেছিলেন।
সরকারি অফিস থেকে তথ্য চুরির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবার (১৮ মে) কারাগারে পাঠানো প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ এই প্রতিবেদকের পরিবারের সদস্যরা জানান, মায়ের বাড়ি ফিরতে দেরির পিছনে আসল কারণ এখনও জানানো হয়নি শিশুটিকে।
রোজিনা ইসলামের মা তাসলিমা বেগম সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “রোজিনা প্রথমে ফোনে আমার সাথে কথা বলেছিল এবং মেয়েকে বলতে বলেছিল সে দু'দিনের মধ্যেই ফিরে আসবে।”
তাসলিমা বেগম বলেন, সোমবার সকালে তিনি মেয়ের বাসায় আসেন এবং তার স্বামী মনিরুল ইসলাম মিন্টু বেলা দেড়টার দিকে করোনাভাইরাসের টিকা নিতে বের হয়ে যান।
তাসলিমা বেগম ভেবেছিলেন রোজিনা ও তার স্বামী বাসায় ফিরে আসলে সন্ধ্যায় তিনি বাড়ি ফিরে যাবেন। কিন্তু তা আর হয়নি।
তাসলিমা বেগম জানান, ভ্যাকসিন পাওয়ার পর তার মেয়ে তাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু পরে সেখানে কী হয়েছিল জানতে পেরে পায়ের নিচে মাটি সরে যায় তাসলিমা বেগমের।
তিনি বলেন, “বুধবার তার (রোজিনা) স্বামী ফোন করলে রোজিনা মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলে। মেয়েকে সে বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত আমাদের কাছে থাকতে বলে।”
রোজিনার ভাই মো. সেলিম মিয়া বলেন, “আমরা বাচ্চাটাকে কিছুই জানতে দিইনি। আশা করি, রোজিনাকে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত বিষয়টি ওর কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে পারবো।”
তসলিমা আরও বলেন, “আমরা আমার নাতনিকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছি। তবে তাকে টেলিভিশন বা মোবাইল ফোন দেখতে দিচ্ছি না। আমরা চাই না নিজের সাহসী মাকে এভাবে কাঁদতে বা পুলিশ ঘেরাও করা অবস্থায় ও দেখুক।”
এক প্রশ্নের জবাবে রোজিনা ইসলামের ভাই আরও বলেন, “মামলাকরার বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে। তবে সবার আগে রোজিনাকে জেল থেকে বের করতে চাই। তাকে বাড়িতে আনার পর আমরা ব্যবস্থা নেব।”
কি হয়েছিল?
দুর্নীতি সম্পর্কিত প্রতিবেদনের জন্য পরিচিত প্রথম আলো সংবাদপত্রের অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম সোমবার (১৭ মে) বিকালে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান।
তার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অফিসিয়াল নথি চুরি ও অবৈধভাবে ছবি তোলার অভিযোগ এনে ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সচিবালয়ে আটক করে হয়রানি করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর রাত সাড়ে ৮ টার দিকে তাকে সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের একজন উপসচিব রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একটি মামলাও দায়ের করেন।
মঙ্গলবার (১৮ মে) সকালে, রোজিনা ইসলামকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হলে পুলিশের দাবি করা পাঁচ দিনের রিমান্ড নাকচ করে আগামী বৃহস্পতিবার জামিন শুনানি পর্যন্ত কারাগারে প্রেরণ করা হয়। মঙ্গলবার বিকালেই তাকে গাজীপুরে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে, মন্ত্রণালয়ে রোজিনা ইসলামের আটকের খবর ছড়িয়ে পড়লে বুধবার (১৯ মে) ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকরা রোজিনা ইসলামকে গ্রেফতার ও মামলার নিন্দা জানিয়ে বিক্ষোভ করে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
অন্যদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়, সচিবালয়ে ঘটা পুরো ঘটনাটি তদন্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে।
মতামত দিন