অন্তত আগামী ঈদুল ফিতর পর্যন্ত এই সহায়তা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার প্রাথমিক পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। সেজন্য প্রয়োজন আপনার সহায়তা
আগে কখনোই এতগুলো দিন না খেয়ে থাকেনি ৮ বছর বয়সী ফাহিমা। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি এই ছোট্ট শিশু ও তার পরিবারের সামনে দাঁড় করিয়েছে এমন কঠিন বাস্তবতা।
ত্রাণের আশায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ফাহিমা অশ্রুসজল নয়নে ঢাকা ট্রিবিউনকে জানায় তার দুদর্শার কথা।
তখন রাজধানীর রায়ের বাজার এলাকার দুর্গা মন্দির রোডে অসহায় মানুষদের খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী দিয়ে সহায়তা করছিল ঢাকা ট্রিবিউন।
কয়েকদিন ধরেই ফাহিমাদের ঘরে কোনো খাবার নেই। মাঝে এক প্রতিবেশি সামান্য কিছু খাবার দিয়েছিলেন। সেটুকু দিয়েই আপাতত চলছে তাদের।
ছোট্ট এই শিশুটির বাবা একজন পোশাক শ্রমিক আর মা কাজ করেন লোকের বাড়িতে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি ছুটিতে তারা দু’জনেই এখন কর্মহীন। তাই পাঁচ সদস্যের এই পরিবারটি এখন চলছে অন্যদের সহায়তায়।
শিশুটির ভাষায়, আরামের জীবন না হলেও কোনোদিন এমন না খেয়ে থাকতে হয়নি।
দুর্দশা কেবল নিম্ন আয়ের মানুষেরই নয়। মধ্যবিত্ত সমাজের প্রতিনিধি হাসিবুল হাসান শাহীন একজন শিক্ষিত যুবক। কাজ করতেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। খাদ্য সহায়তার আশায় তিনিও লজ্জাবনত মুখে দাঁড়িয়েছেন লাইনে।
অসহায় মানুষের এমন কৃতজ্ঞতা ভরা চাহনি আমাদের বড় প্রাপ্তি। ছবি: মেহেদি হাসান/ঢাকা ট্রিবিউন
ঢাকা ট্রিবিউনকে তিনি জানান, মানুষের কাছে খাবার চাওয়ার কথা কোনোদিন কল্পনাও করেননি। কিন্তু আজ তার ঘরে কোনো খাবার নেই। স্থানীয় কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাননি তিনি।
তিনি বলেন, “ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আমাদের মতো মধ্যবিত্তের জন্য একটি হটলাইনের কথা জানিয়েছিলেন। আমি সেই নম্বরেও কল করেছিলাম, কোনো সাড়া পাইনি।”
এমন অবস্থা আরও কিছুদিন চলতে থাকলে কী করবেন জানতে চাইলে কেবল একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন তিনি।
মধ্যবয়স্ক রিকশাচালক খালেদ আহমেদ হীরা তার সাত সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। খাদ্য সহায়তার আশায় বাসাবো থেকে রিকশা চালিয়ে রায়ের বাজারে এসেছেন তিনি।
এই কঠিন সময়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, কখনো কখনো দিনে মাত্র একবেলা খেয়ে থাকতে হচ্ছে। তাই মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিতে সরকাররের কাছে আবেদন জানান তিনি।
ফাহিমা, শাহিন ও হীরা তিনটি নামমাত্র। এই কঠিন সময়ে এমন অজস্র মানুষ আছেন যারা মান-সম্মানের কথা ভুলে সহায়তা চাইছেন। কারণ অভাব জানে না সম্মানের সংজ্ঞা।
ফাহিমা, শাহিন ও হীরার মতো এমন ২২৫টি পরিবারকে সামান্য সহায়তা করেছে ঢাকা ট্রিবিউন। এই কার্যক্রমে সহায়তা দিয়েছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই)।
বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় সহায়তা করা হয়েছে রায়ের বাজার এলাকার অসহায় মানুষদের।
এই কার্যক্রমটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে মাঠে সহায়তা করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন” ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)।
প্রথম দফায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন থেকে অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে খাদ্য সামগ্রীর পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে পরিচ্ছন্নতা সামগ্রীও। প্রতিটি বক্সে ছিল চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, তেল, লবণ, সাবান ও পুনঃব্যবহারযোগ্য মাস্ক। সহায়তা পাওয়া প্রতিটি পরিবার এই দ্রব্যসামগ্রী দিয়ে অন্তত ১৪ দিন চলতে পারবে।
এই সহায়তা কার্যক্রমে জেসিআই ঢাকা ইয়ং ছাড়াও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সহায়তা করেছেন ঢাকা ট্রিবিউনের প্রকাশক কাজী আনিস আহমেদসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা ট্রিবিউনের সঙ্গে ছিল- জাগো ফাউন্ডেশন, প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও এক টাকার আহার।
অন্তত আগামী ঈদুল ফিতর পর্যন্ত এই সহায়তা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার প্রাথমিক পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। তবে মানুষের প্রয়োজনীয়তা এবং অর্থ পাওয়ার ওপর নির্ভর করে কর্মসূচির মেয়াদ বাড়তে পারে।
এই কর্মসূচির জন্য চলতি মাসের শুরু থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়েছে ঢাকা ট্রিবিউন। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, ব্র্যান্ড, এনজিও এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এতে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
এই কার্যক্রমকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আরও অর্থের প্রয়োজন। তাই সম্মানিত পাঠকদের প্রতি আমরা এই ক্যাম্পেইনে সহায়তার আহ্বান জানাই। সহায়তা করতে পারেন: বিকাশ- ০১৬১৪৯২৬৮৩৮; এবি ব্যাংক (কাওরান বাজার শাখা): ৪০০২-৪৩৬৪২৮-৪৪১।
মতামত দিন