বাংলাদেশি অভিনেত্রীদের নিয়ে টলিউড অভিনেত্রীদের ক্ষোভ থাকলেও তাদের সঙ্গে নিজেদের প্রতিযোগিতার কথা মানতে নারাজ জয়া-মিথিলা-বাঁধনরা
অভিনেতা-অভিনেত্রীরা মুখে যতই বলুক না কেন কারও সঙ্গে কারও কোনো প্রতিযোগিতা নেই, আদতে সবাই জানেন চলচ্চিত্র ভুবনে শীর্ষস্থানে আরোহণের অলিখিত লড়াই সবার ভেতরই থাকে। টলিউড ইন্ডাস্ট্রিও এর বাইরে নয়।
প্রশ্ন আসতেই পারে টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম স্থান দখলের লড়াইটা এখন কাদের মধ্যে? ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী সহজভাবে বললে লড়াইটা দুই বাংলার অভিনেত্রীদের মধ্যে।
টলিউডে চলচ্চিত্রের ক্ষেত্র তুলনামূলকভাবেই খুব ছোট। এখানে অভিনেত্রীর সংখ্যা অনেক হলেও নারীকেন্দ্রিক চলচ্চিত্রের সংখ্যা কমই। এ কারণে টলিউড অভিনেত্রীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আগে থেকেই ছিল।
তবে তখন বাণিজ্যিক ধারার পাশাপাশি ভিন্নধর্মী চলচ্চিত্রও তৈরি হওয়ায় সবাই যার যার ক্ষেত্র অনুযায়ী প্রত্যেক অভিনেত্রী আলাদা ভূমিকায় জনপ্রিয় ছিলেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পাওলি দাম, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, রাইমা সেনরা ছিলেন ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্রের পরিচিত মুখ। অন্যদিকে, শুভশ্রী, শ্রাবন্তী, মিমি চক্রবর্তী, নুসরাত জাহানরা ছিলেন মূল ধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় মুখ।
বর্তমানে টলিউডে মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির চাহিদা কমেছে এবং ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্রের দর্শক ও জনপ্রিয়তা উভয়ই বেড়েছে। ফলে বাণিজ্যিক ধারার অভিনেত্রীরাও ঝুঁকেছেন ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্রের দিকে। জয়া আহসান বিগত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি আজমেরি হক বাঁধন, রাফিয়াথ রশীদ মিথিলার মতো বাংলাদেশি অভিনেত্রীরাও যোগ হয়েছেন সেই তালিকায়। ফলে প্রতিযোগিতা আরও বেড়ে পেয়েছে নতুন মাত্রা।
জয়া আহসান
শুধু যে টলিউডের চলচ্চিত্রে কাজের জন্যেই বাংলাদশের অভিনেত্রীরা কাজ করছেন এমনটি কিন্তু নয়। বরং নিজের চরিত্র এবং কাজের মাধ্যমে প্রশংসাও কুড়োচ্ছেন তারা। ফলে ওপার বাংলার দর্শকদের কাছেও তারা হয়ে উঠছেন জনপ্রিয় মুখ।
প্রকাশ্যে না বললেও বাংলাদেশি অভিনেত্রীদের নিয়ে টলিউডের অনেক অভিনেত্রীর ক্ষোভের কথা অজানা নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিনেত্রী বলেন, ‘‘এমন অনেক চরিত্রই বাংলাদেশি অভিনেত্রীদের দেওয়া হয়, যেটা এখানকার যে কেউ করতে পারত।’’
বাংলাদেশে গিয়ে কাজ করা এক টলিউড নায়িকা বলেন, ‘‘এখানে (টলিউড চলচ্চিত্রে) বাংলাদেশের শিল্পীরা যত সুযোগ পান, সেই তুলনায় ওপার বাংলায় আমাদের কাজের সুযোগ বেশ কম।’’
তবে এ প্রতিযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশি অভিনেত্রীদের কি মতামত?
টলিউডে বাংলাদেশি অভিনেত্রীদের কাজ করার শুরুটা যার হাত ধরে হয়েছিল তিনি হলেন জয়া আহসান। ‘আবর্ত’’ দিয়ে টলিউড পথযাত্রা শুরু করার পর ‘‘রাজকাহিনী’’, ‘‘বিসর্জন’’, ‘‘বিজয়া’’, ‘‘কণ্ঠ’’, ‘‘বিনিসুতোয়’’ চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন তিনি। এছাড়া, তার অভিনীত আরও ৩টি টলিউড চলচ্চিত্র রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়। তিনি কিন্তু এ প্রতিযোগিতাকে দেখছেন বেশ ইতিবাচকভাবেই।
আনন্দ প্লাসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকা তো ভালই। আমার মতে শিল্পের কোনও সীমারেখা থাকা উচিত নয়।’’
রাফিয়াথ রশীদ মিথিলা
একই কথা রাফিয়াথ রশীদ মিথিলার কণ্ঠেও। রাজর্ষি দে পরিচালিত ‘‘মায়া’’, রিঙ্গো পরিচালিত ‘‘আ রিভার ইন হ্যাভেন’’এ রয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘কেউ কারও কাজ, জায়গা কেড়ে নিতে পারে বলে মনে হয় না। সকলেই নিজের যোগ্যতা দিয়ে কাজ পাচ্ছেন। আমি বৈবাহিক সূত্রে কলকাতায় থাকছি, তাই এখানেই কাজ করছি এখন। তবে আমি এখানে সদ্য কাজ শুরু করেছি। আমাকে বোধহয় কারও প্রতিযোগী হিসেবে দেখাটা ঠিক হবে না।’’
এছাড়া, এক ইন্ডাস্ট্রির অভিনয় শিল্পীদের অন্য ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার কথাও বলেন মিথিলা।
আজমেরী হক বাঁধন
জয়া ও মিথিলার তুলনায় আরেক বাংলাদেশি অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন অত বেশি টলিউড চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি। তবে মিথিলার স্বামী সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’’ওয়েব সিরিজ়ে তার কাজ প্রশংসিত হওয়ায় অনেক টলিউড পরিচালকই তাকে নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী।
বাঁধনের ধারণা, প্রতিযোগিতার চর্চা অভিনেত্রীদের উপরে বাড়তি চাপ তৈরি করে। তিনি বলেন, ‘‘অনেকে বলছেন, বাংলাদেশ থেকে অভিনেত্রীরা এসে কাজ করায় টলিউডের কিছু অভিনেত্রীর মনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। আসলে আমাদের সমাজ এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে দেয়। বিশেষ করে নারীদের উপরেই বেশি চাপ তৈরি করা হয়। কেন এই চাপগুলো আমাদের নিতে হবে? এগুলো এড়িয়ে সমর্থক দিকগুলো ভাবলে, সকলেরই ভালো হবে। সকলে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাবেন। কথাটা কলকাতা-বাংলাদেশ সব ইন্ডাস্ট্রির নিরিখেই বলছি।’’
তবে ইন্ডাস্ট্রিতে যতই প্রতিযোগিতা থাকুক না কেন, দিনশেষে মেধা, প্রতিভা, সর্বোপরি কাজই যে দিনশেষে সাফল্যের ক্ষেত্রে জয়ের শেষ হাসি হাসবে- এ ব্যাপারে সবাই একমত।
মতামত দিন