চাল, ডাল, সবজি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে
হঠাৎ করেই বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। ফলে কপালে ভাঁজ পড়েছে স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষের। কমপক্ষে ১০-২০% বেড়েছে মাসিক বাজার খরচ।
রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ১৩ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, “আমাদের মতো মানুষের যে কী নিদারুণ কষ্ট কেউ বোঝে না। বেতন তো আর বছর বছর বাড়ে না। এমন জীবন সত্যি দুঃসহ।”
“তাই টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য নিতে দাঁড়িয়ে আছি যদি কিছুটা খরচ সাশ্রয় করা যায়। যতো বড় লাইন, মনে হয় না আজ পাব। গতকাল (বুধবার) মালিবাগের এই ট্রাকের সামনেই ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে চলে গিয়েছিলাম।”
কেবল আলাউদ্দিনই নন, অনেক সীমিত আয়ের মানুষই এই পরিস্থিতির সম্মুখীন। দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কিছু করার নেই তাদের।
দফায় দফায় চাল, ডাল, পেঁয়াজ, চিনিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় ভিড় সামাল দিতে তাই হিমশিম খাচ্ছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) পরিচালিত ট্রাক সেল কার্যক্রমও।
রাজধানী বিভিন্ন স্পটে ঘুরে প্রতিটি ট্রাকের সামনে ৫০ থেকে ৬০ জন করে ক্রেতার লাইন দেখা গেছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যা অনেক বেশি।
কোনো কোনো জায়গায় ট্রাক আসার আগেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য দেখা গেছে শহরের এসব উন্মুক্ত বিক্রয়স্থলে।
বিক্রেতারা জানান, আগে ট্রাক সেলে কম দামে নিত্যপণ্য কিনতে নিম্নআয়ের মানুষ বিশেষ করে দিনমজুর, রিকশাচালক, গাড়িচালক কিংবা গৃহকর্মীরা বেশি আসত। তবে এখন সেই লাইনে পণ্য কিনতে মধ্যবিত্তরা ভিড় করছেন যা তাদের জন্য বাড়তি চাপও বটে।
মেরাদিয়া এলাকায় টিসিবির ট্রাকসেল কার্যক্রম পরিচালনা করেন ডিলার কামাল।
তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে মানুষ বেশি ভিড় করে আমাদের কাছে। আমরা সাধারণত স্বল্পআয়ের মানুষের কাছে বিক্রি করি। এখন চিত্র ভিন্ন। সাধারণ বাজার থেকে কম বলে অনেকে ভিড় করছে।
‘‘আগে আমাদের মালামাল বিক্রি কার্যক্রম শেষ করতে সন্ধ্যা হয়ে যেত। এখন তো ঘণ্টা দুয়েকের ভিতর সব শেষ হয়ে যায়। আমাদের বরাদ্দ কম বলে অনেকে না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। চাহিদার তুলনায় অনেক কম,’’ তিনি বলেন।
টিসিবির ঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী হুমায়ুন কবির বলেন, “ভোক্তাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে টিসিবি এখন ১০ থেকে ১২% পণ্য সরবরাহ করছে যা আগে এটি ছিল মাত্র ১-২%। চাহিদা বাড়ায় ট্রাকসেল বাড়ানো হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “টিসিবির পণ্য সারা বছরই বিক্রি হচ্ছে। গত এক বছরে প্রতি মাসেই বিক্রি হয়েছে। কোনো মাস বাদ যায়নি। পণ্য বিক্রির পরিমাণও পর্যায়ক্রমে বাড়বে।”
তবে ক্রেতারা টিসিবির সক্ষমতা আরও বাড়ানোর দাবি করেছেন সরকারের কাছে। যাতে তাদের খরচ কিছুটা হলেও সাশ্রয় হয়।
টিসিবি কর্মকর্তারা জানান, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে এ উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন “ট্রাক সেল” বন্ধ থাকছে। ট্রাক সেলে সাশ্রয়ী মূল্যে তিনটি পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১০০ টাকা এবং মসুর ডাল ও চিনি প্রতি কেজি ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হবে।
এক একটি ট্রাকে ৫০০-৮০০ লিটার তেল, ৪০০-৬০০ কেজি চিনি এবং ৪০০-৬০০ কেজি মসুরের ডাল বরাদ্দ থাকে বলে জানান। আর খোলা বাজারে সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, চিনি ৭৮ টাকা এবং দুই ধরনের মসুরের ডাল ১০০ ও ৮০ টাকা করে।
নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে নাকাল ভোক্তারা টিসিবির ট্রাক সেলের দায়িত্বে থাকা কয়েকজন জানান, একজন দুই কেজির বেশি নিতে পারে না। যে পরিমাণ পণ্য আমাদের দেয়া হয়, তা দিয়ে লাইনে দাঁড়ানো সবাইকে দেওয়া যায় না। এজন্য অনেককেই ফেরত যেতে হয়।
টিসিবি আরও জানায়, ঢাকা আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে সিটি এলাকাসহ আশপাশের কয়েকটি জেলায় ৭৪টি ট্রাকে ডিলারদের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি হয়েছে। প্রতিটি ট্রাকে সাধারণত ৬০০ লিটার সয়াবিন তেল, ৫০০ কেজি চিনি ও ৪০০ কেজি মসুর ডাল বরাদ্দ দেয়া হয়।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে মোটা দানার মসুর ডালের। বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৮৮ থেকে ৯০ টাকা কেজি। সপ্তাহ দুয়েক আগেও ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় কেনা যেত। গত জানুয়ারিতে এই মানের ডাল ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি।
খুচরা দাম ৭৫ টাকা বেঁধে দিলেও কিন্তু এই দামে পাওয়া যাচ্ছে না চিনি। বাজারে এখন খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। আর প্যাকেটজাত চিনি বেচাকেনা হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি।
ভোজ্য তেল সয়াবিন ও পাম তেলের দামও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। বাজারে এখন খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪২ টাকা কেজি। সেপ্টেম্বরের শুরুতেও খোলা সয়াবিন ছিল ১৩৭ থেকে ১৩৮ টাকা কেজি। এর আগে গেল জানুয়ারিতে ছিল ১২২ থেকে ১২৪ টাকা কেজি। বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন ১৫৩ থেকে ১৬০ টাকা লিটার। গত আগস্ট পর্যন্ত ছিল ১৪৫ থেকে ১৪৯ টাকা লিটার। জানুয়ারিতে ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। সয়াবিনের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে পাম তেলের দামও। পাম লুজ ও সুপার বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৩৪ থেকে ১৩৬ টাকা কেজি। গত আগস্ট পর্যন্ত ছিল ১২২ থেকে ১২৮ টাকা, এর আগে জানুয়ারিতে ছিল ১০০ থেকে ১১২ টাকা কেজি।
মতামত দিন