প্যানেলটিতে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদ, গবেষক এবং বাণিজ্য বিশ্লেষকদের পাশাপাশি আইটি এবং ই-কমার্স খাতের প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞরা থাকবেন
ই-কমার্স খাতে ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য নতুন একটি প্যানেল গঠন করতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যে প্যানেল স্থানীয় পর্যায়ে বির্তকিত ই-কমার্স খাতকে নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন প্রণয়ন বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দেবে।
প্যানেলটিতে সরকারি কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদ, গবেষক এবং বাণিজ্য বিশ্লেষকদের পাশাপাশি আইটি এবং ই-কমার্স খাতের প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞরা থাকবেন।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান হাফিজুর রহমান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “যদিও এ বিষয়ে আন্ত:মন্ত্রণালয় কমিটি বিদ্যমান রয়েছে, তবে বৃহত্তর স্টেকহোল্ডারদের সুপারিশ প্রয়োজন।”
বর্তমান কমিটিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি রয়েছে।
ইভালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা শপিং, সিরাজগঞ্জ শপ এবং অন্যান্যদের মতো সন্দেহজনক ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম কর্তৃক সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু কেলেঙ্কারির ঘটনার প্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান পণ্য ক্রয়ে অবিশ্বাস্য ছাড় দিলেও গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে; এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পণ্যের পুরো দাম অগ্রীম নিয়েছে।
আরও পড়ুন: গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম মূল্য নিতে পারবে না ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) কর্মকর্তারা ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, ই-কমার্স খাতে গ্রাহকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য একটি কাঠামোর মাধ্যমে বেশ কয়েকটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংশ্লিষ্টতা প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, আইসিটি বিভাগ, এটুআই, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ই-ক্যাব সূত্র জানায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রতিযোগিতা কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, এবং অন্যান্য প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি ঝুঁকি নিরসন ব্যবস্থাপনা কমিটিও অপরিহার্য। যে কমিটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করবে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও গত সপ্তাহে জানিয়েছিলেন যে, এই খাতকে পরিচালনার জন্য বেশ কিছু নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংশ্লিষ্টতা প্রয়োজন, কারণ কিছু ব্যবসা প্রযুক্তি ভিত্তিক নিবন্ধিত, যা সরকারের আইসিটি, এটুআই শাখার অধীনে পড়ে।
অভিন্ন ব্যবসায় শনাক্তকরণ নম্বর (বিআইএন) বাধ্যতামূলক
হাফিজুর রহমান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসাসহ সব ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মকে একটি অভিন্ন ব্যবসায় শনাক্তকরণ নম্বর (বিআইএন) কর্মসূচির আওতায় আনা হবে যাতে এই খাতটি নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ করা যায় “
আরও পড়ুন: ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসায়েও লাগবে ট্রেড লাইসেন্স
তিনি আরও বলেন “প্রচারণা, পণ্য এবং ডেলিভারি সম্পর্কে গ্রাহকের পর্যালোচনা এবং অনলাইনে ভোক্তাদের পোস্ট করা মতামত পর্যালোচনার পর নিবন্ধন দেওয়া হবে। অভিন্ন ব্যবসায় শনাক্তকরণ নম্বর (বিআইএন) ছাড়া কোন অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হবে না। অনলাইন নিবন্ধনের জন্য এটুআই এবং আইসিটি বিভাগ একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছে। আমরা আশা করছি এই বছরের শেষের দিকে কার্যক্রম শুরু করতে পারব।”
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার মতে, যদি কোনো প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের হয়রানির একাধিক অভিযোগ থাকে তবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ওই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্থগিত করবে।
আরও পড়ুন: ই-কমার্সের প্রতারণা থেকে গ্রাহকদের বাঁচাতে প্রচারণা চালানোর পরামর্শ আদালতের
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে পণ্য সরবরাহ, অগ্রিম অর্থ নেওয়া, প্রতারণামূলক লেনদেন এবং আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগে ই-কমার্স খাত জর্জরিত।
ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, সিরাজগঞ্জ শপ এবং প্রিয়শপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে।
আলেশা মার্টের বিরুদ্ধে নিজস্ব কার্ডের মাধ্যমে পণ্যে ৫০% ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে সম্প্রতি চালু হওয়া স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (এসওপি) লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।
এইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ চিহ্নিত করে তথ্য প্রকাশ করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
আরও পড়ুন: ১০ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের আলাদা নিরীক্ষা চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক
এই খাতে ব্যাপক কেলেঙ্কারির পরে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ডিজিটাল মার্কেটপ্লেসের গ্রাহকদের সুরক্ষার জন্য যাচাই প্রক্রিয়ার অনুমোদন দিয়েছে।
যদিও এই খাতে জড়িতদের মতে, নতুন নিয়ন্ত্রক সংস্থা সহজে ব্যবসা চালানোর ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম চালডালের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াসিম আলিম জানান, নতুন নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠনের আগে আরও আলোচনা হওয়া দরকার। সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিদ্যমান কমিটি দিয়েই এই খাতকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “অতিরিক্ত নিয়ম নতুন ব্যবসাকে নিরুৎসাহিত করবে।”
ওয়াসিম আলিমের সাথে একমত পোষণ করে বিডিজবস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম ফাহিম মাশরুরও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলিকে শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন।
এর আগে গত বুধবার, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিলেন যে, দেশের উদীয়মান ই-কমার্স ব্যবসাকে সুগম করতে ই-কমার্স অথরিটি, কেন্দ্রীয় অভিযোগ ব্যবস্থাপনা সেল এবং ডিজিটাল কমার্স অ্যাক্ট গঠনের জন্য সরকার কাজ শুরু করবে।
মতামত দিন