উদ্ভাবিত আখের এই জাতে চিনিধারণ ক্ষমতা ১২.০৬-১৫.১১ শতাংশ ও গুড় আহরণ হার ১০.৭৫ শতাংশ
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট উচ্চফলনশীল এবং অধিক চিনি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন জাতের আখ উদ্ভাবন করেছে।
বুধবার (৩০ জুন) বিএসআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. আমজাদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৫তম সভায় এ জাতটি অবমুক্ত করা হয়।
সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানায়, এ জাতের ফলন বহুল প্রচলিত চেকজাত ঈশ্বরদী-৩৯ এর চেয়ে ৭.৩৬ শতাংশ বেশি। আখের এই জাতে চিনিধারণ ক্ষমতা ১২.০৬-১৫.১১ শতাংশ ও গুড় আহরণ হার ১০.৭৫ শতাংশ। জাতটি মোটা এবং স্মার্ট ও উইল্ট রোগ প্রতিরোধী। এতে লালপচা রোগ দেখা যায় না।
ঈশ্বরদী দাশুড়িয়া অঞ্চলের কৃষক মহিরুল আলম বলেন, এ জাতের আখের পাতা কম ধারালো হওয়ায় মাঠের শ্রমিকরা অনায়াসে ক্ষেতে কাজ করতে পারেন। যার ফলে এই আখক্ষেতে শ্রমিকের ঘাটতি হবে না।
তিনি আরও বলেন, অনেক সময় দেখা যায় আখের পাতায় ধার বেশি থাকায় শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। যার কারণে আখের পাতা নষ্ট হয়ে যায়। ফলনও কম হয়।
দাশুড়িয়া ইউনিয়নের আখচাষি আনিস মিয়া জানান, নতুন এই জাতটি উদ্ভাবনে আমরা খুব আশাবাদী। এতদিন আখ চাষ করে অনেককে লোকসান গুনতে হয়েছে। অনেকেই ঋণ নিয়ে আখ চাষ করে পথে বসেছে। এখন হয়তো এই জাত আবাদ করে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারব।
জানা যায়, ২০০৯ সালে ভারত ও পাকিস্তানের দুটি জাতের আখ সংকরায়নের মাধ্যমে উদ্ভাবিত ক্লোনটিকে পুনরায় নিজেদের মধ্যে সংকরায়ন করে ২০১১ সালে আই ১১১/১১ ক্লোনটি নির্বাচিত করা হয়।
এরপর প্রাথমিক ফলন পরীক্ষা, অগ্রবর্তী ফলন পরীক্ষা, আঞ্চলিক ফলন পরীক্ষাসহ বেশ কিছু গবেষণার মাধ্যমে এটিকে নতুন জাত হিসেবে অবমুক্তির জন্য নির্বাচন করা হয়। জাতীয় বীজ বোর্ডের জাত অবমুক্তির ওই সভায় সব সদস্যের উপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে জাতটি অবমুক্ত করা হয়। এ সময় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার জাতটির প্রশংসা করেন।
ঈশ্বরদী সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা পরিচালক সঞ্জিত কুমার পাল বলেন, আখের নতুন এই জাতটি উদ্ভাবনের মাধ্যমে সুগার মিলের পাশাপাশি আখচাষিরাও ব্যাপক লাভবান হবেন। এই জাতের আখচাষে ব্যাপক সুবিধা আছে। একদিকে শ্রমিক কম লাগবে অন্যদিকে ফলন বেশি হবে। দেশের চিনি শিল্পের ঘাটতি মিটবে।
মতামত দিন