গত ৫ বছরে মোংলা বন্দরে নিলামে বিক্রি হয়েছে মাত্র ৫৫টি গাড়ি। আর গত চার মাসে নিলামে উঠানো হয় ৫ শতাধিক গাড়ি, যার মধ্যে ৯৯টির নিলাম সম্পন্ন হয়েছে
চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে মোংলা বন্দর দিয়ে ৪৫.৮ শতাংশ গাড়ি আমদানি হ্রাস পেয়েছে। তবে এর পরও এ বন্দরে রাজস্ব আয় রয়েছে উর্ধ্বমুখী।
গত পাঁচ বছরে মোংলা বন্দরে নিলামে বিক্রি হয়েছে মাত্র ৫৫টি গাড়ি। আর গত চার মাসে নিলামে উঠানো হয় ৫ শতাধিক গাড়ি, যার মধ্যে ৯৯টির নিলাম সম্পন্ন হয়েছে।
মোংলা কাস্টম হাউজ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে মোংলা কাস্টম হাউজ ৫ হাজার ২৬৬কোটি টাকা রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত আদায় হয়েছে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
পাশাপাশি বন্দরে পড়ে থাকা গাড়ি নিলামে তোলায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গাড়ি ছাড় করে নিয়ে যাচ্ছেন। এ কারণেই গাড়ির জট কমতে শুরু করেছে।
মোংলা কাস্টম হাউজের কমিশনার মো. হোসেন আহমেদ বলেন, “মোংলা বন্দরে আমদানিকৃত রিকন্ডিশন গাড়ির বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পরামর্শ দিচ্ছে। অনেক পুরাতন গাড়ি আছে যেগুলো আসলে আমদানিযোগ্য ছিলো না। এ গাড়িগুলোর বিষয়ে সিপি (ক্লিলিয়ারেন্স পারমেট) একটা প্রশ্ন থাকে, এমন বিষয়গুলো এনবিআর সরাসরি দেখছে।”
তিনি আরও জানান, “এমন আমদানি অযোগ্য গাড়ির সংখ্যা ১৫০টির উপরে। সবকিছু বিবেচনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পারমিট করলে এ ধরনের গাড়ি নিলামে তোলা সম্ভব হবে।”
বন্দর কর্তৃপক্ষ ও মোংলা কাস্টম হাউজ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠান মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি করে।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মামলার কারণে খালাস কার্যক্রম ব্যহত হয়। ফলে বন্দর শেড ও ইয়ার্ডে গাড়ির জট লাগে।
নিয়ম অনুযায়ী, আমদানি করা গাড়ি বন্দরে পৌঁছার ৩০ দিনের মধ্যে ছাড় করিয়ে না নিলে সেগুলো নিলামে চলে যায়। বিক্রির জন্য কাস্টম কর্তৃপক্ষ গাড়ি নিলামে তোলে। তবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মামলার কারণে নিলাম প্রক্রিয়ায় ক্রেতাদের সাড়া মেলেনি।
আটকে থাকা গাড়িগুলোর দ্রুত খালাসের বিষয়ে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সমাধান হলে নিলামে আগ্রহ বাড়ে ক্রেতাদের।
সরেজমিনে বন্দরে গিয়ে দেখা যায়, শুল্ক জটিলতার কারণে শেড ও ইয়ার্ডে খালাসের অপেক্ষায় সারিবদ্ধভাবে পড়ে রয়েছে টয়োটা, নিশান, লেক্সাস, মার্সিডিজসহ অসংখ্য গাড়ি।
এদিকে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মামলা ও তাদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বারবিডা) সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাস পরিস্থিতে গাড়ির বাজারে ধস নেমেছে। এ বিষয়গুলো সহানুভুতিতার সাথে বিবেচনা করতে হয়। ছয় মাস আগেও বন্দরে অনেক গাড়ি ছিলো, যার কারণে বন্দরে জট সৃষ্টি হয়েছিলো।
এছাড়া বিভিন্ন সময় আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হাইকোর্টে গিয়েছে। হাইকোর্ট অনেক সময় পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিলাম স্থগিত করার রায় দেন। এছাড়া প্রতিটা নিলামের আগে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ করা হচ্ছে।
পাশাপাশি হাইকোর্ট যখন যে ধরনের তথ্য চাচ্ছে, সাথে সাথে সে তথ্যগুলো পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে হাইকোর্ট এখন যত্রতত্র নিলাম স্থগিতের আদেশ দিচ্ছে না। তারপরও কিছুটা অসুবিধা হয়। কিন্তু নিলামের সার্বিক বিষয়গুলো দেখলে ফল ভালোই।
মতামত দিন