শ্বেত-শুভ্রতায় সোনা-ধোয়া রঙের পরশে সজনে ফুল দোল খায় ফাগুনের মাতাল হাওয়ায়। সেই দোলা ছুঁয়ে যায় পথচারীর হৃদয়েও।
“সজনে ডাঁটায় ভরে গেছে গাছটা, আর আমি ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি। খোকা তুই কবে আসবি? কবে ছুটি?”, কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহের কবিতার সেই সজনে গাছে থোকায় থোকায় ধরেছে ফুল।
শ্বেত-শুভ্রতায় সোনা-ধোয়া রঙের পরশে সজনে ফুল দোল খায় ফাগুনের মাতাল হাওয়ায়। সেই দোলা ছুঁয়ে যায় পথচারীর হৃদয়েও।
রাজশাহীর গাছে গাছে শোভা পাওয়া নান্দনিক সাদা সজনে ফুলের শোভায় মগ্ন ভ্রমর গুঞ্জনে। ফুলগুলো নিজেকে ডাঁটায় পরিপূর্ণ করার প্রতিযোগিতায় যেন ব্যস্ত সময় পার করছে। চলতি মৌসুমে প্রতিটি সজনে গাছের শাখা-প্রশাখা নুয়ে পড়ছে ফুলের ভারে। মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌমাছির গুঞ্জন, বসন্ত বাতাসে ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ আকৃষ্ট করছে পথিককেও।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সজিনার ভালো ফলন আশা করছে চাষি ও রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। বহুগুণের জাদুকরি সবজি এই সজনে ডাটা রাজশাহীতে এখনও বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয়নি। বাড়ির পাশে পতিত জমি, রাস্তার পাশেই অনেকটা অযত্নে অবহেলায় বেড়ে ওঠে গাছটি।
রাজশাহীতে এ বছর প্রায় ১২৬ হেক্টর জমিতে সজনের আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৫৪০ মেট্রিক টন ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছে, রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
রাজশাহী কৃষি অফিস জানায়, সজিনা চাষে মাটি বেলে দোঁআশ ও দোয়াঁশ এবং পিএইচ ৫.০ হতে ৯.০ সম্পন্ন মাটি সহ্য করতে পারে। সজিনাচাষে সারের তেমন প্রয়োজন হয় না। কারণ সজিনার বিস্তৃত ও গভীর শিকড় রয়েছে। তবে ইউরিয়া এবং জৈব সার প্রয়োগ করলে গাছ ভাল হয়। এ বৃক্ষটির বীজ ও ডালের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করা সম্ভব। বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তারের ক্ষেত্রে এপ্রিল-মে মাসে গাছ থেকে পাকা ফল সংগ্রহ করা যায়। ডালের মাধ্যমে বংশ বিস্তারের কাজটি আমাদের দেশে করা হয়ে থাকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত করা হয়। কারণ এ সময় ডাটা সংগ্রহের পর গাছগুলোকে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়। ফলে অঙ্গজ বংশ বিস্তারের জন্য এর সহজ প্রাপ্যতা বেড়ে যায়। তাছাড়াও এ সময়ে দু’একটি বৃষ্টি হয়ে থাকে যার ফলে লাগানো ডালটি সহজেই টিকে যায়।
পুকুর, রাস্তা বা বাড়ির পাশের পতিত জমিতে অযত্নে-অবহেলায় বেড়ে ওঠে সজনে গাছ। ঢাকা ট্রিবিউন
সজনেচাষি পবা উপজেলার মধুপুর গ্রামের সাগর আলী জানান, তিনি বাণিজ্যিকভাবে সজনে চাষ করেন না। তবে তার খামার চারপাশে সজনে গাছ লাগিয়েছেন। সজনে ডাঁটা খুব সুস্বাদু এবং ডাক্তাররাও এটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে তিনি প্রতি মৌসুমে প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার ডাঁটা বিক্রি করে থাকেন।
আরেক চাষি রিপন আলী জানান, এখন সজিনা গাছে থোকায় থোকায় ফুল ধরেছে। কোনো কোনো গাছে পাতা না থাকলেও গাছ ফুলে পরিপূর্ণ। এ সময়টায় গাছের কাছে গেলে অন্য রকম একটা ঘ্রাণ পাওয়া যায়। যেটা পথচারী যে কাউকেই আকৃষ্ট করতে পারে। আর তিনি মূলত নিজের পরিবারের চাহিদা পূরণেই বাড়ির পাশে কয়েকটি গাছ লাগিয়েছেন। তবে সজিনা গাছগুলোতে যে পরিমাণ ডাঁটা পাওয়া যায় তা পরিবারের চাহিদা পূরণ করে বিক্রিও করা যায়।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) উম্মে সালমা জানান, দেশে সজনে সচারচর দু’ধরনের হয়ে থাকে। মৌসুমী এবং বারমাসী। রাজশাহীতে আগে বারমাসী জাতের সজনে আবাদ কম হলেও এখন তা বাড়ছে। কেননা বারোমাসীতে উৎপাদন বেশি হয়। সজনের নানাবিধ গুণের কারণে প্রতি বছর দেশের প্রায় সব স্থানে প্রচুর পরিমাণে সজিনার ডাল রোপন করা হয়। সাধারণত অন্যান্য ফসলাদির মত সজনে গাছের জন্য কোনো চাষাবাদ কিংবা রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয় না। মূলত গ্রামাঞ্চলের লোকেরা নিজ বাড়ির পাশে বা অনুপযোগী ক্ষেতের আইল, পুকুর খানা, গর্তে ও ঢিবির উপর অথবা রাস্তার দু’পাশে সজনে গাছের ডাল লাগিয়ে থাকেন এবং অযত্নে বেড়ে ওঠা এই সজনে গাছ এক থেকে দু’বছরের মধ্যে ফুল ফল দেয়।
তিনি আরও জানান, “পুষ্টিগুণের দিক থেকে সজনে অত্যন্ত উপকারী একটি সবজি। সজনে অল্প দিনেই খাওয়ার উপযোগী হয় এবং বাজারজাত করা যায়। খেতে সুস্বাদু ও বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকায় সজনে চাষ অত্যন্ত লাভজনক। সজনে চাষে সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করতে কৃষি অফিস কাজ করছে।”
মতামত দিন