ভিয়েতনাম, চীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত এবং তুরস্কের মতো দেশগুলো মহামারির মধ্যেও রপ্তানি প্রতিযোগিতা এবং বাজার ধরে রেখেছে, কিন্তু বাংলাদেশ নতুন কিছু অর্জন করতে পারেনি
বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্মেলনে (ইউএনসিটিএডি) বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি কার্যক্রম এর নিকটতম প্রতিযোগীদের তুলনায় বেশ ধীর গতির ছিল।
ভিয়েতনাম, চীন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত এবং তুরস্কের মতো দেশগুলো মহামারির মধ্যেও রপ্তানি প্রতিযোগিতা এবং বাজার ধরে রেখেছে, কিন্তু বাংলাদেশ নতুন কিছু অর্জন করতে পারেনি।
ইউএনসিটিএডি এর গ্লোবাল ট্রেড আপডেটের ফেব্রুয়ারি সংস্করণে এই তুলনাটি করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রপ্তানি ভোলাটিলিটির সূচক আনুমানিক ০.৫২, যেখানে ভিয়েতনামের ছিল আনুমানিক ০.৩৯, ইন্দোনেশিয়া ০.০৩, চীন ০.৩৯ এবং তুরস্কের ০.৫০।
দক্ষিণ এশিয়ায় ০.৬৭ পয়েন্টসহ সর্বোচ্চ ভোলাটিলিটি পাকিস্তানের।
ভোলাটিলিটি প্যাটার্ন শনাক্ত করতে গত ছয় মাস জুড়ে রপ্তানি ভোলাটিলিটি রপ্তানির কার্যকারিতা ট্র্যাক করে, এবং একটি বৃহত্তর স্কোর উচ্চ রপ্তানি দুর্বলতা বোঝায়। তথ্যে ইন্ট্রা-ইইউ বাণিজ্য বাদ দেয়া হয়।
বাংলাদেশের রপ্তানি পারফরম্যান্স কাঙ্ক্ষিত হওয়ার মতো অনেক কিছুই ছিল, কেননা ভারতের ভোলাটিলিটিও ০.৩৫।
রপ্তানি পারফরম্যান্স হলো একটি সংযুক্ত সূচক যেখানে প্রবৃদ্ধির হার, সহকর্মীদের তুলনায় কর্মক্ষমতা এবং বড় ও গতিশীল বাজারগুলোতে প্রতিযোগিতা অন্তর্ভুক্ত। একটি বৃহত্তর স্কোর উচ্চ রপ্তানির কার্যকারিতা বোঝায়।
কোভিড-১৯ কেবল বিশ্বব্যাপী চাহিদাতে নয়, দেশগুলোর তুলনামূলক প্রতিযোগিতায়ও গভীর প্রভাব ফেলেছে।
বানিজ্য আপডেটে আরও জানানো হয়, কিছু দেশ বৈশ্বিক বাজার শেয়ার লাভ করেছে, যেখানে বেশিরভাগ দেশের রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে। কারণ তাদের অর্থনীতি মহামারির চ্যালেঞ্জগুলো আরও ভাল কাজে লাগাতে সক্ষম ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর ফলে বিশ্বব্যাপী চাহিদার পতন যেমন সবচেয়ে কম প্রতিযোগিতামূলক সরবরাহকারীদের বিশ্ব বাজার থেকে সরে আসতে বাধ্য করে তেমনি সবচেয়ে অধিক প্রতিযোগিতামূলক সরবরাহকারীদের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া চলাকালীন সমৃদ্ধশালী হতে সক্ষম করে।
এতে আরও বলা হয়, মহামারি চলাকালীন চীন সবচেয়ে বিরূপ প্রভাবিত খাত যেমন পরিবহন সরঞ্জাম এবং রাস্তা যানবাহন সহ অনেকগুলো ক্ষেত্রে বাজারের শেয়ার দখল করতে সক্ষম হয়েছিল।
তবে ইউএনসিটিএডি জানায়, মহামারী চলাকালীন বাণিজ্য বৃদ্ধি পেলেও কিছু খাতে চীনের রপ্তানি প্রতিযোগিতা হ্রাস পেয়েছে। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড এবং তাইওয়ান এই খাতগুলোতে অতিরিক্ত চাহিদা অর্জন করতে তুলনামূলকভাবে ভাল সক্ষম হয়।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি ভোলাটিলিটি মূলত কাঁচামালের সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার কারণেই কমে যায়। কেননা কাঁচামালের মূল উত্স চীন গত বছরের জানুয়ারি থেকে লকডাউনে ছিল।
গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশ কোভিড-১৯ এর প্রথম কেইস নিশ্চিত করেছিল। এতে প্রাথমিক সরবরাহ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। এবং পরবর্তীতে আমদানিতে ঝামেলা সঙ্কটটিকে ত্বরান্বিত করে যা রফতানি আয়ের উপরও প্রভাব ফেলেছিল।
জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান বলেন, "চীন তার শক্তিশালী উত্পাদন ভিত্তির কারণে পর্যাপ্ত কাঁচামাল থাকায় প্রতিযোগিতা অর্জন করেছিল।"
অন্যদিকে, নভেল ভাইরাসের বিস্তার রোধে সবচেয়ে সফল দেশ হওয়ায় ভিয়েতনামের রপ্তানি কম অস্থিতিশীল ছিল। তিনি আরও জানান, মহামারির মধ্যে উত্পাদন সচল রাখার সক্ষমতার কারণে এটি রপ্তানি প্রতিযোগিতা ও বাজার শেয়ারও অর্জন করেছে।
সর্বোপরি, দুটি বৃহত্তম গন্তব্যস্থান, যারা তার চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি আমদানি করে, ইউরোপীয় দেশগুলো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুদীর্ঘ লকডাউনের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির সম্মুখীন হয়।
তবে চীন এবং অন্যান্য প্রতিযোগী দেশগুলোর এই দুটি ব্লকের বাইরে অন্য রপ্তানি গন্তব্যস্থান রয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০ সালের জানুয়ারি-নভেম্বর মাসে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ১৪% কমেছে। আর ভিয়েতনামে ছয় শতাংশ কমেছে। পাকিস্তান ও কম্বোডিয়ার পোশাক রপ্তানি আট শতাংশ কমেছে এবং ইন্দোনেশিয়াতে কমে তিন শতাংশ।
তবে মহামারির সময় বিশ্বব্যাপী পোশাক রপ্তানি ১২% হ্রাস পেয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে যে, নির্দিষ্ট খাতের অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক কিছু বাজার শেয়ার অন্য খাতে হারিয়ে কোভিড-১৯ বিশ্ব বাজারে দেশগুলোর প্রতিযোগিতাকে আক্রান্ত করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন, সুইজারল্যান্ড, তাইওয়ান (চীন প্রদেশ), তুরস্ক, উগান্ডা এবং ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো ২০২০ সালে তুলনামূলকভাবে উন্নত রপ্তানির পারফরম্যান্স অর্জন করেছে।
অন্যদিকে, কলম্বিয়া, নাইজেরিয়া, সৌদি আরব এবং ভেনেজুয়েলা গত বছর তুলনামূলকভাবে খারাপ পারফর্ম করে।
মতামত দিন