একটি দেশ গ্রাজুয়েশন প্রাপ্তির জন্য প্রস্তাবিত হওয়ার পরে ৩-৫ বছরের প্রস্তুতিকালীন সময় উপভোগ করতে পারে। এই সময়ে, একটি দেশ এলডিসিগুলোর জন্য সংরক্ষিত সমস্ত আন্তর্জাতিক সহায়তা ব্যবস্থা উপভোগ করতে পারে
স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে আরও পাঁচ বছর এলডিসি দেশের সুবিধা চাইছে বাংলাদেশ। উন্নয়নকে টেকসই করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ আসন্ন গ্রাজুয়েশনের পরও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এই সুবিধা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনার সময় এলডিসি গ্রাজুয়েশন মানদণ্ডকে দ্বিতীয়বারের মতো পূরণের পাশাপাশি উত্তরণের সুপারিশ লাভ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
সিডিপির আসন্ন ওই সভার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) অনলাইনে অনুষ্ঠিত এক্সপার্ট গ্রুপ সভার এক বৈঠকে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ইউএন-সিডিপির কাছে এই আহ্বান জানায়।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব (ইআরডি) ফাতিমা ইয়াসমিন অধিবেশন চলাকালে একটি উপস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্জন করা অভূতপূর্ব আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির পাশাপাশি গ্র্যাজুয়েশন পর্ব সম্পর্কে দেশের সর্বশেষ অবস্থান তুলে ধরেন।
উপস্থাপনায় উত্তরণ পরবর্তী আন্তর্জাতিক সুযোগ-সুবিধাগুলো অব্যাহত রাখা, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টগুলো অর্জনের লক্ষ্যে উন্নয়ন অর্থায়নের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য সমস্ত মানদণ্ড পূরণ করেছিল ২০১৮ সালে। সে সময় সর্বশেষ সিডিপি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশনের সুপারিশ লাভ করে।
সিডিপির নিয়ম অনুসারে, একটি দেশ গ্রাজুয়েশন প্রাপ্তির জন্য প্রস্তাবিত হওয়ার পরে ৩-৫ বছরের প্রস্তুতিকালীন সময় উপভোগ করতে পারে। আগামী মাসে ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা চলাকালীন সিডিপির সুপারিশের পরে বাংলাদেশ যদি স্নাতকের জন্য পাঁচ বছরের প্রস্তুতিকালীন মেয়াদ পায়, তবে বাংলাদেশ ২০২৬ সালে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে।
এই প্রস্তুতিকালীন সময়ে, বাংলাদেশ এলডিসিগুলোর জন্য সংরক্ষিত সমস্ত আন্তর্জাতিক সহায়তা ব্যবস্থা উপভোগ করতে পারবে।
তারপরও নিয়ম অনুযায়ী, আরও তিন বছর ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে শুল্কমুক্ত, কোটা-মুক্ত বাজার উপভোগ করতে পারবে, যা ২০২৯ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হবে।
বৈঠকে ফাতিমা ইয়াসমিন বলেন, “বাংলাদেশ এমন একটি সময়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হতে চলেছে, যখন সমগ্র জাতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে।”
মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক (পুষ্টি, স্বাস্থ্য, মৃত্যুহার, স্কুলে ভর্তি ও শিক্ষার হারের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়) ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে (প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক আঘাত, জনসংখ্যার পরিমাণ এবং বিশ্ববাজার থেকে একটি দেশের দূরত্বসহ আটটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়) নির্ধারিত চলকগুলো পেরিয়ে গেলে একটি দেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে পারে। এবার সিডিপি সুখবর দিয়েছে।
মতামত দিন