বন্যার প্রকোপের সঙ্গে সঙ্গে সমান তালে চলতে থাকা ভাঙনে নদ-নদী অববাহিকায় বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিলীন হচ্ছে রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন স্থাপনা
অবিরাম বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। বিপৎসীমার ওপর প্রবাহমান থাকা ধরলা পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে এর অববাহিকার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ফলে ইতোমধ্যেই পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। ডুবে গেছে আমন ও সবজি ক্ষেতসহ মাছের ঘের।
এদিকে, বন্যার প্রকোপের সঙ্গে সঙ্গে সমান তালে চলতে থাকা ভাঙনে নদ-নদী অববাহিকায় বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিলীন হচ্ছে রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন স্থাপনা।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় জেলা শহরে ১৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা পর্যন্ত ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে জেলার সদর ও ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলা অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দ্রুত গতিতে বাড়ছে তিস্তার পানি। নুনখাওয়া ও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
পাউবো বলছে, সোমবারের পর থেকে ধরলা ও তিস্তার পানি কমতে থাকবে তবে আরও দুই বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে তিস্তা , ধরলা ও দুধকুমার অববাহিকায় নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তিস্তার ভাঙনে রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে শতাধিক পরিবার এবং ধরলার ভাঙনে সদর উপজেলার হলোখানা ও ভোগডাঙা ইউনিয়নে প্রায় অর্ধশত পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে বাস্তুহারা জীবন যাপন করছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) তিস্তার ভাঙনে জেলার রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের বিদ্যানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে চলে গেছে। এছাড়াও তিস্তায় বিলীন হয়েছে ওই গ্রামের অন্তত ২০টি পরিবারের ভিটেমাটি।
পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, ভারতে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় উজানের ঢলে জেলার নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যে দেশের অভ্যন্তরে ভারি বর্ষণের ফলে নদীতে পানি বৃদ্ধিসহ ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে।
জেলায় বড় ধরণের বন্যার সম্ভাবনা নেই জানিয়ে পাউবো’র এই নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, “ব্রহ্মপুত্র নদের পানির স্তরের সাথে তিস্তা ও ধরলার পানির স্তরের বড় ধরনের ব্যবধান থাকায় এই দুই নদীতে ( তিস্তা ও ধরলা) স্রোতের তীব্রতা বেড়েছে। এর মধ্যে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদী তীরবর্তী মাটি আরও নরম হয়ে যাচ্ছে। ফলে বেশ কিছু যায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে আমরা আশা করছি আগামী তিন চার দিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।”
এদিকে, ভারী বৃষ্টিপাত আর বন্যায় জেলা সদরের মোগলবাসা, হলোখানা, ভোগডাঙ্গা, পাঁচরাশি ও কাঁঠালবাড়ী, রাজারহাটের ছিনাই, মীরেরবাড়ি, মহীধর ও দেবালয় এবং ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙা ও শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের আমন, বেগুন, মূলা, কপি ও লাল শাকের ১৮ হাজার ২২০ হেক্টর ফসলের ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। একইসঙ্গে ডুবে গেছে হাজার হাজার হেক্টর পশু চারণভূমি।
জেলা কৃষি অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপরিচালক শামসুদ্দিন মিঞা জানান, চলমান বন্যায় জেলায় আমন ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে ১৭ হাজার ১৩৫ হেক্টর। এছাড়াও শবজি ক্ষেত ৩৫০ হেক্টর, মাসকালাই ৬৫৫ হেক্টর ও চিনা মাদাম ৮০ হেক্টর নিমজ্জিত হয়েছে।
মতামত দিন