নিরাপত্তাজনিত কারণে নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লার পরিবার বাংলাদেশ বা মিয়ানমার ছাড়া অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরিত হওয়ার আবেদন করেছে
নিরাপত্তাজনিত কারণে নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লার পরিবারের সদস্যরা জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশ কিংবা মিয়ানমার ছাড়া তৃতীয় কোনো দেশে স্থানান্তরিত হতে চান।
সম্প্রতি শিশুসহ মুহিবুল্লার পরিবারের ১০ সদস্য, আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) মুখপাত্র মোহাম্মদ নওখিম এবং মুহিবের কিছু ঘনিষ্ঠ সহযোগী এই আবেদন করেন।
জাতিসংঘসহ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থার সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ কিংবা মিয়ানমার ব্যতীত তৃতীয় কোনো দেশে স্থানান্তরের আগে প্রথমে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে সরিয়ে তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার বিষয়ে তারা অনুরোধ করেছিল।
অভ্যন্তরীণ সূত্রমতে, প্রয়াত রোহিঙ্গা নেতার পরিবারের সদস্যরা এবং অন্যান্য পরিচিতজনরা প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ায় নিরাপত্তা চেয়ে আসছিলেন।
আরও পড়ুন- মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা: স্বচ্ছ তদন্তের দাবি যুক্তরাষ্ট্রের
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বুধবার (৬ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে জানায়, মুহিবুল্লার মৃত্যুর পর থেকে সশস্ত্র গোষ্ঠীর নতুন হুমকি এবং সহিংসতাসহ অন্যান্য ঝুঁকির কারণে অন্তত এক ডজন কর্মী জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা, ইউএনএইচসিআর এবং বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে নিরাপত্তা প্রার্থনা করে।
মানবাধিকার কর্মীদের উদ্ধৃতি দিয়ে তারা জানায়, রোহিঙ্গা কর্মীদের জন্য ক্যাম্পের ভেতরের পরিবেশ ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।
ইউএনএইচসিআরের এক মুখপাত্র বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, মুহিব, এআরএসপিএইচের অন্যান্য প্রতিনিধি এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের অনেক বিশিষ্ট সদস্যকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
মুহিবুল্লার পরিবার ও সহযোগীদের অন্য দেশে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে ইউএনএইচসিআর কোনো ব্যবস্থা নেবে কি-না জানতে চাইলে তিনি জানান, বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইউএনএইচসিআর আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে এবং বিভিন্ন ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
মানবাধিকার কর্মী নুর খান লিটন জানান, মুহিবের পরিবার ও সহযোগীদের অন্যত্র সরিয়ে দিলে ভালো হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘তারা সবেমাত্র একটি আঘাতের মধ্য দিয়ে গিয়েছে এবং তারা ভীত বোধ করছে।’’
আরও পড়ুন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী: মুহিবুল্লাহ হত্যায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা সেবা বিভাগের সচিব মোকাব্বির হোসেন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজারের উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পে গত ২৯ সেপ্টেম্বর আততায়ীরারা এআরএসপিএইচের চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাকে গুলি করে হত্যা করে।
তার ভাই হাবিবুল্লার মতে, সে এবং তার ভাই সেই রাতে এশার নামাজের পর এআরএসপিএইচ অফিসে যান। তাদের সঙ্গে আরও ১০-১২ জন লোক ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই হামলাকারীরা ওই স্থানে প্রবেশ করে মুহিবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। তিনবার গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর মুহিবুল্লার মৃত্যু হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে এবং এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তবে বন্দুকধারীদের এখনও আটক করা সম্ভব হয়নি।
মতামত দিন