প্রতি হেক্টরে এ জাতের ধান ৬ টন ফলেছে। প্রচলিত আমনের তুলনায় এ ধান দেড় মাস আগে পাকে
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন উচ্চফলনশীল আগাম আমনের জাত “বিনাধান-১৬” চাষ করে আয় বেড়েছে গোপালগঞ্জের কৃষকদের। বছরে তিন থেকে চারটি ফসল আবাদের সুযোগ থাকায় লাভজনক এ জাতের ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কৃষকরা।
বিনা গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার গোপীনাথপুর, সুকতাইল, জালাবাদ ও কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর, বেথুড়ি, ফুকরা ইউনিয়নে অন্তত ৫ বছর ধরে এ ধানের আবাদ হয়ে আসছে। এ বছর জেলার ৩শ’ কৃষক ১৫০ হেক্টর জমিতে বিনাধান-১৬ আবাদ করেছেন। প্রতি হেক্টরে এ জাতের ধান ৬ টন ফলন দিয়েছে। প্রচলিত আমনের তুলনায় এ ধান দেড় মাস আগে পাকে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পাইকেরডাঙ্গা গ্রামের কৃষক সুমন খান বলেন, “প্রচলিত আমন ধান চাষ করে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ টন ফলন পাওয়া যায়। বিনাধান-১৬ জুলাই মাসে রোপন করেছি। ১০০ দিনে এই ধান পেকেছে। আমরা এখন পাকা ধান কাটছি। প্রতি হেক্টরে এ জাতের ধান ৬ টন ফলন দিয়েছে। বাম্পার ফলনের পাশাপাশি আমরা বেশি দামে খড় বিক্রি করতে পারছি। স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন এ ধানের আবাদ করে আমরা একই জমিতে বছরে তিন থেকে চারটি ফসল ফলিয়ে লাভবান হচ্ছি।”
একই গ্রামের কৃষক মাহাতাব উদ্দিন বলেন, “বিনাধান-১৬ এর ফলন ভালো হয়। ধান উৎপাদনে সময় কম লাগে। চাল সরু। বাজারে একটু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তাই আগামীতে লাভজনক এ ধানের চাষ অব্যাহত রাখব।”
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেবদাস মল্লিক বলেন, “বিনাধান-১৬ স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন ও উচ্চ ফলনশীল। এ জাত গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্র থেকে নিয়ে কৃষকরা ৫ বছর আগে আবাদ শুরু করেন। তারা এর বীজ সংরক্ষণ করে প্রতিবছর ধানের আবাদ বৃদ্ধি করছেন। এতে তাদের আয় বাড়ছে। তাই কৃষকের মধ্যে ধানের এ জাত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।”
বিনা গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্রের পরিদর্শক ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম আকন্দ বলেন, কৃষক ও কৃষির উন্নয়নে আমরা মাঠ গবেষণার কাজ করে যাচ্ছি। কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণে আমাদের চেষ্টা আব্যাহত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা কৃষকেরও ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। তাই কৃষকরা আমাদের বীজ, প্রযুক্তি, পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিয়ে আয় বৃদ্ধি করছেন।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, “২০৩০ সালের মধ্যে ফসলের নিবিড়তা বাড়িয়ে কৃষকের আয় আমরা দ্বিগুণ করে দিতে চাই। কৃষকরা যাতে বছরব্যাপী ফসল আবাদের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি করে আর্থ সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। তাই কৃষককে বিনাধান-১৬ আবাদে উদ্বুদ্ধ করণের মাধ্যমে মাটির উর্বরতা ঠিক রেখে ২ ফসলের জমিতে ৩ ফসল ও ৩ ফসলের জমিতে ৪ ফসল ফলানোর কলাকৌশল ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছি।
মতামত দিন