প্রায় ৯ বছর আগে ঢাকার বাড্ডা কালাচাঁনপুর লিচু বাগান এলাকায় খেলতে গিয়ে হারিয়ে যায় নাজিম হাওলাদার
সবাজ সেবা কার্যালয়ের প্রচেষ্টায় হারিয়ে যাওয়ার ৯ বছর পর ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন রিকশা চালক বাবা লিটন হাওলাদার। দীর্ঘদিন পর পরিবারকে পেয়ে খুশি কিশোর নাজিম হাওলাদারও (১৫)। বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ওই কিশোরকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নাজিম হাওলাদারের বাড়ি বরিশালের বাগেরগঞ্জ উপজেলার মধ্যম মহেষপুর গ্রামে।
পরিবার ও সমাজ সেবা কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রায় ৯ বছর আগে ঢাকার বাড্ডা কালাচাঁনপুর লিচু বাগান এলাকায় খেলতে গিয়ে হারিয়ে যায় নাজিম হাওলাদার। পরে ট্রাফিক পুলিশের মাধ্যমে তাকে বাড্ডা থানায় হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে আদালতের মাধ্যমে শিশু কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নাজিমকে টাঙ্গাইল সরকারি শিশু পরিবারে আনা হয়। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে শিশু পরিবারের শিক্ষার্থীরা বাবা-মাসহ আত্মীয় স্বজনের কাছে গেলেও নাজিমসহ আরও কয়েক শিশু পরিবারে থেকে যায়। এ অবস্থা দেখে সরকারি শিশু পরিবার বালকের উপ-তত্বাবধায়ক সৌরভ তালুকদার তাদের পরিবারের খোঁজ করতে থাকেন। লিফলেট, মাইকিংসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পরিবারের খোঁজ করতে থাকে। এরপর পাওয়া যায় তার পরিবারের সন্ধান।
কিশোর নাজিম হাওলাদারকে হস্তান্তরের সময় জেলা প্রশাসক ড. আতাউল গনি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আমিনুল ইসলাম, সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল সাহাবুদ্দিন খান, জেলা সমাজ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শাহ আলম, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ, সরকারি শিশু পরিবার বালকের উপ-তত্বাবধায়ক সৌরভ তালুকদার, নাজিম হাওলদারের বাবা লিটন হাওলদারসহ তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নাজিমের বাবা লিটন হাওলাদার বলেন, “আমি ৩০ বছর যাবত ঢাকায় রিকশা চালাই। ঢাকার কালাচানপুর লিচু বাগান এলাকায় খেলতে গিয়ে নাজিম হারিয়ে যায়। এ ব্যাপারে থানায় জিডিও করা হয়েছিল। গত পাঁচ দিন আগে ঢাকায় রিকশা চালানোর সময় লিফলেট দেখে আমার ছেলেকে চিনতে পেরে তাদের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করি। পরে সেখানকার কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে আমার ছেলেকে ফেরত দেয়।
তিনি আরও বলেন, “নার্সারিতে ভর্তি করার কিছুদিন পর থেকে আমার ছেলে নিখোঁজ হয়। আমার ছেলেকে ফিরে পাবো তা কল্পনাও করিনি। আমার বড় ছেলে হারিয়ে যাওয়ায় আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। এতদিন পর আমার ছেলেকে ফিরে পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত ও খুশি। যারা আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিয়েছে তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।”
কিশোর নাজিম হাওলাদার বলেন, “ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে সবাই বাড়ি যেত। তখন আমি বাড়িতে যেতে না পারায় মন খারাপ হতো। অনেক সময় খুব কষ্ট হতো। আমিও ভাবতাম আমার বাবা মাকে ফিরে পাব। মা বাবাকে ফিরে পেয়ে দীর্ঘ দিনের কষ্ট দূর হলো। যাদের মাধ্যমে আমার বাবা মাকে ফিরে পেলাম সেই সমাজ সেবা বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রতি আমি খুব কৃতজ্ঞ। তাদের মঙ্গল কামনা করি।”
টাঙ্গাইলের সরকারি শিশু পরিবার বালকের উপ-তত্বাবধায়ক সৌরভ তালুকদার বলেন, “ নাজিমকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে খুবই ভাল লাগছে। বাকিদেরও পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ টাঙ্গাইল সরকারি শিশু পরিবারে (বালক) এখন পর্যন্ত ৮০ জন রয়েছে। নাজিম হাওলাদার এর মতো এখানে আরও ৪ জন রয়েছে যাদের এখন পর্যন্ত কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি।”
এ প্রসঙ্গে জেলা সমাজ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শাহ আলম বলেন, “অনেক প্রচেষ্টা ও প্রতিকূলতার পর সকলের প্রচেষ্টায় নাজিম হাওলাদারকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি। এটি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল।”
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আতাউল গনি বলেন, “হারিয়ে যাওয়া কিশোর নাজিমকে সমাজ সেবা বিভাগ তার বাবা মার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা খুবই প্রসংশনীয়।”
এই মানবিক কাজে সঙ্গে জড়িত সমাজ সেবা কার্যালয়ের সকল কর্মকর্তাদের তিনি ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি সকল মানবিক কাজে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাজ সেবা বিভাগকে সকল প্রকার সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন। এই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সমাজ সেবা কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করার ঘোষণা দেন তিনি।
মতামত দিন