শাপলা দেখতে হলে অবশ্যই খুব সকালে যেতে হবে, কারণ বেলা বাড়তেই শাপলা ফুল নিজেকে গুটিয়ে নেয়
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ধোপাডাঙ্গা-গাবুরদিয়া বিলে শোভা ছড়াচ্ছে শাপলা ফুল। বিশাল এলাকার বিলটি এখন লাল-সাদা শাপলার অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। লাল শাপলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছে এলাকা ও উপজেলাবাসী। সৌন্দর্য উপভোগ করতে উপজেলার গণ্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছেন।
ফরিদপুর শহর থেকে প্রায় ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল কোড়কদি ইউনিয়নের ধোপাডাঙ্গা-গাবুরদিয়া গ্রাম। মধুখালী উপজেলা সদর থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার। যা লাল শাপলা রাজ্য হিসেবে পরিচিত।
দূর থেকেই এর সৌন্দর্য নজর কাড়ে সবার। কাছে যেতেই মন ভুলিয়ে দেয় জাতীয় ফুল শাপলার সৌন্দর্য। এ যেন প্রকৃতির বুকে আঁকা এক নকশিকাঁথা। সূর্যের আভাকেও যেন হার মানিয়েছে এ বিলে ফোটা লতাপাতা গুল্মসহ লাল ও সাদা শাপলা।
এলাকাবাসী জানান, বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা ৫০- ৬০ বছর বয়সী বিলটির আকার ও দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটার। বিলে দুই ধরনের শাপলা জন্মালেও লাল শাপলাই বেশি। সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় তিন মাস এ বিলে শাপলা ফোটে।
শাপলা এখন সবজি হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়। শাপলা তুলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে এলাকার অনেকেই এ সময় জীবিকা নির্বাহ করছেন। এখানকার জমিগুলো মালিকানাধীন।
এলাকার বাসিন্দা গৌতম বিশ্বাস বলেন, “শাপলা দেখতে হলে অবশ্যই খুব সকালে যেতে হবে। কারণ বেলা বাড়তেই শাপলা ফুল নিজেকে গুটিয়ে নেয়।”
এসব জমির মালিক ও এলাকাবাসী বিলটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষার পাশাপাশি সরকারিভাবে মৎস্য অবমুক্তকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
স্থানীয়রা জানান, এ বছর শাপলা ফুল কম ফুটেছে। প্রচুর কচুরির কারণে শাপলার বিস্তার তেমন ঘটেনি। স্থানীয় প্রশাসন একটু নজর দিলে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি হতো।
স্থানীয় চেয়ারম্যান মুকুল হোসেন রিক্ত বলেন, “এ শাপলার বিলটি ইউনিয়নের পরিচিতি বাড়িয়ে দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা করে এর সৌন্দর্য ধরে রাখার চেষ্টা করা হবে।”
এ বিলের বিষয়ে মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, “সময় করে বিলটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবির বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের চেষ্টা করা হবে।”
মধুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, “বিলটি আমার উপজেলার একটি সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এটি রক্ষার পাশাপাশি এলাকাবাসীর দাবি ও বিলের সৌন্দর্য বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।”
এ প্রসঙ্গে ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক ড. হযরত আলী বলেন, “ফরিদপুরে বর্ষা মৌসুমে প্রায় দুই শতাধিক খাল, বিল, নদী-নালা, জলাশয়ে শাপলা পাওয়া যায়। তবে আগের মতো বর্ষা না হওয়ায় এর উৎপাদন কমেছে। মধুখালীর ধোপাডাঙ্গা বিলটিতে প্রচুর লাল শাপলা ফোটে। এর সৌন্দর্য মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে।”
ধোপাডাঙ্গা শাপলা বিলে আসতে হলে প্রথমে মধুখালী বাজার থেকে রামদিয়া হয়ে শ্রীরামপুর মোল্লাডাঙ্গী গাবুরদিয়া সংলগ্ন ধোপাডাঙ্গা শাপলার বিল। এখানে প্রতিটি বাড়িতেই নৌকা আছে। নৌকায় চড়ে আগতরা বিলটি ঘুরে এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
মতামত দিন