শিক্ষক পঙ্কজ মধু বলেন, ‘ছবিটি যে ফেসবুকে ছড়িয়ে গেছে তা আমার জানা নেই। আর ভাইরাল হওয়ার জন্যও আমি এই কাজটা করিনি’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পঙ্কজ মধু (৪৫) নামে এক স্কুল শিক্ষক তার শিক্ষার্থীর শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করেছেন, এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
রবিবার (৩ অক্টোবর) সদর উপজেলার চিনাইর আঞ্জুমানআরা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক পঙ্কজ মধু তার ছাত্রীর কন্যাশিশুকে কোলে নিয়ে ক্লাস করান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে হয়। এক বছর পর ওই শিক্ষার্থীর একটি কন্যাশিশু জন্ম হয়।
সম্প্রতি বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষক পঙ্কজ মধু জানতে পারেন দশম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে। পরে তিনি তাকে খবর দেন বিদ্যালয়ে আসার জন্য। রবিবার সকালে ওই শিক্ষার্থী তার তিন মাস বয়সী কন্যাকে কোলে নিয়ে বিদ্যালয়ে আসে। কিন্তু কোলে সন্তান থাকায় ক্লাসের পাঠে মনোযোগ দিতে পারছিল না। এ সময় শিক্ষক পঙ্কজ মধু শিশু কন্যাকে কোলে নিয়ে পাঠদান করান। তখন কেউ একজন ছবিটি তুলে ফেসবুকে পোষ্ট দেয়। সাথে সাথে ছবিটি ভাইরাল হয়।
শিক্ষক পঙ্কজ মধু বলেন, “ছবিটি যে ফেসবুকে ছড়িয়ে গেছে তা আমার জানা নেই। আর ভাইরাল হওয়ার জন্যও আমি এই কাজটা করিনি। ”
তিনি বলেন, “২১ বছর ধরে শিক্ষকতা করছি। আমি একজন শিক্ষক হিসেবেই বাঁচতে চাই। শিক্ষার্থীর সুবিধার কথা চিন্তা করে আমি তার সন্তানকে কোলে নিয়ে ক্লাস করাই।”
তিনি বলেন, “সম্প্রতি স্কুল খোলার পর আমি যখন জানতে পারি ওই ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে। তখন আমার খুব খারাপ লাগছিল। পরে আমি তার সাথে যোগাযোগ করে তাকে বিদ্যালয়ে আসতে বললে সে তার স্বামীর সঙ্গে নিয়ে শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে স্কুলে আসে। তখন আমি শিক্ষার্থী ও তার স্বামীকে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য বুঝাই। তখন শিক্ষার্থী তার শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে ক্লাসে যায়। কিন্তু শিশুটির জন্য সে ক্লাসে মনযোগ দিতে পারছিল না। তাই আমি তার শিশুটিকে কোলে নিয়ে ক্লাস করাই।”
শিক্ষক পঙ্কজ মধু গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার বিটকাটিয়া গ্রামের লিও মধুর ছেলে। তিনি সদর উপজেলার চিনাইর আঞ্জুমানআরা উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করে আসছেন। বর্তমানে বসবাস করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার দাতিয়ারা গ্রামে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন বলেন, “পঙ্কজ মধু একজন ভালো শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে সে খুব আন্তরিক। শ্রেণিকক্ষে সে সব সময় শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।“
মতামত দিন