ড্রেজার দুটির ভাড়া বাবদ ৪ কোটি ২৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা আদায়ে মামলা দায়ের করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, মামলার প্রধান আসামী কোটালীপাড়া থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মেহেদী হাসান মুন
উদ্ধারের পর ৪০ কোটি টাকা মূল্যের দুইটি ড্রেজার রহস্যজনকভাবে রূপসা নদীতে ডুবে গেছে। ড্রেজারের ভাড়া বাবদ ৪ কোটি ২৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা আদায়ে মামলা দায়ের করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। মামলার প্রধান আসামী হাওলাদার কনস্ট্রাকশন স্বত্বাধীকারী গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মেহেদী হাসান মুন।
পাউবো খুলনার ড্রেজার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম নবী জানান, ড্রেজার দুটির তলা ফেটে যাওয়ার কারণে ডুবে গেছে।
তিনি জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা কাজ করেন। পাউবোর নির্দেশনা অনুযায়ী হাওলাদার কনস্ট্রাকশনের কাছে ৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা ড্রেজার ভাড়া আদায়ের জন্য সার্টিফিকেট মামলা করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের জন্য বিরতির পর গত ২৮ সেপ্টেম্বর মামলার তারিখ নির্ধারিত থাকলেও বিবাদি পক্ষের আবেদেনের কারণে সময় বাড়ানো হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার ড্রেজার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দায়ের করা মামলার বিবরণে বলা হয়েছে- গোপলগঞ্জ জেলার ঘাগর নদী খননের জন্য মের্সাস হাওলাদার কনস্ট্রাকশন ২০১৬ সালে পাউবোর মহাপরিচালক বরাবরে এসডি কপোতাক্ষ ১৮ ইঞ্জি ও এসডি ভদ্রা ১২ ইঞ্জি ডায়া কাটার সাকশন ড্রেজার দুটি লিজ/ভাড়ার জন্য আবেদন করেন। ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর আবেদনের পর ৩০ অক্টোবর ড্রেজার পরিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কেএম নুরুল ইসলামের দপ্তারাদেশে ড্রেজার দুটি হাওলাদার কনস্ট্রাকশনকে সব মালামালসহ হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। এই দপ্তারাদেশের পর কোনো চুক্তিপত্র ছাড়াই হাওলাদার কনস্ট্রাকশন নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ড্রেজার দুটি খুলনা থেকে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া নিয়ে যান। চুক্তিপত্র করার এবং প্রথম কিস্তি পরিশোধ করার জন্য অনুরোধ করা হলেও তা করা হয়নি।
পরবর্তী সময়ে প্রধান প্রকৌশলী শামছুদ্দিন আহমেদ যোগদানের পর কৌশলে ড্রেজার গ্রহণের ১০ মাস পর ড্রেজার ভাড়ার চুক্তি হয়। ২০১৭ সালে ১ আগষ্ট চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করান। চুক্তিপত্রে এস ডি কপোতাক্ষ বছরে [ভ্যাটসহ] ২ কোটি ৭৯ লাখ ৮২ হাজার ৮০ টাকা পাইপ ভাড়া ৬৪ হাজার ৫ ২ টাকা এবয় এস ডি ভদ্রার ভাড়া বাবদ ৭৯ লাখ ২৮ হাজার ২৫৬ টাকা ও পাইপ ভাড়া ৬২ হাজার ৫১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ২০১৮ সালে ৩ জানুয়ারী সরকারী ড্রেজার ব্যবহার করে ভাড়া না দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় কর্তৃপক্ষ নড়ে চড়ে বসেন। ড্রেজার বিভাগ ড্রেজার দুটি উদ্ধারের জন্য তৎপরতা শুরু করে। ড্রেজার দুটি গ্রহণের জন্য দুটি ট্যাগবোর্ড খুলনা থেকে কোটালীপাড়া প্রেরণ করা হয়। সেই ট্যাগবোর্ড দুটির সাহায্যে ২০১৮ সালের ১৬ আগষ্ট ড্রেজার দুটি খুলনায় আনা হয়। এরপর নির্বাহী প্রকৌশৈলী দপ্তর হতে হাওলাদার কনস্ট্রাকশনকে ড্রেজার দুটি ১৫ মাস ১৫ দিন ব্যবহার ভাড়া বাবদ ৪ কোটি ৬৬ লাখ ৩৪ হাজার ২২৪ টাকার দাবি নামা পেশ করা হয়। এই ভাড়ার টাকা বিপরীতে জামানত হিসাবে দেওয়া ৪০ লাখ ৬৫ হাজার ৬৬৪ টাকা সমন্বয় করার পর মোট পাওনা থাকে ৪ কোটি ২৫ লাখ ৬৮ হাজার ৫৫৯ টাকা।
মোসার্স হাওলাদার কনস্ট্রাকশন স্বত্বাধিকার মেহেদী হাসান মুন জানান, ভাড়ার ব্যাপারে ডিজির কাছে তারা আবেদন করেছেন। তিনি মামলা দায়েরের বিষয়টি অবহিত বলেও জানান।
ড্রেজার বিভাগের আইনজীবী এড সমর চন্দ্র মন্ডল জানান, ড্রেজার ভাড়ার দাবি নামা লিগ্যাল নোটিশকে হাওলাদার কনস্ট্রাকশন কোনো গুরুত্ব না দেয়ায় এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালতে আগামী ২৮ অক্টোবর শুনানীর দিন ধার্য করা রয়েছে।
মতামত দিন