বাংলাদেশের মোট বনভূমির মধ্যে প্রায় ৪ লাখ হেক্টর জমি বন্যপ্রাণীদের জন্য সংরক্ষিত
প্রতি বছর ৪ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী বিশ্ব প্রাণী দিবস পালন করা হয়। মূলত প্রাণীদের অধিকার নিশ্চিতকরণেই দিবসটি পালিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে বিশ্ব প্রাণী দিবস উপলক্ষে প্রাণিবিদরা ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “বন্যপ্রাণীর হুমকির বিরুদ্ধে সরকারকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক ইউনিয়নের (আইইউসিএন) প্রধান মূল্যায়নকারী মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ বলেন, “গত ১০ বছরে দেশের সুরক্ষিত জমির মোট এলাকা ৬০% বৃদ্ধি পেলেও তা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের প্রধান জীববৈচিত্র্যপূর্ণ একটি অংশ। কিন্তু আবাসস্থল ধ্বংস এবং বাণিজ্যিক চোরাচালানের কারণে সেখানকার প্রাণীরা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “তাছাড়া নৃতাত্ত্বিক কার্যকলাপ যেমন নির্মাণ, অপরিকল্পিত পর্যটন এবং ফল এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক বাগানের জন্যে জমির ব্যবহারও প্রাণীদের হারানোর পেছনে বড় কারণ।”
ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্সের প্রধান নির্বাহী শাহরিয়ার সিজার রহমান বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রতি মানুষের মানসিকতা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের দেশের মানুষ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের বিষয়ে অভ্যস্ত নয়। মানুষের সদিচ্ছা ছাড়া একটি প্রজাতিও রক্ষা করা সম্ভব নয়। অবৈধ দখলদার এবং চোরা শিকারিরা এটিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।”
বন বিভাগের মতে, বাংলাদেশের মোট বনভূমি ২.৬ মিলিয়ন হেক্টর, যা কি না দেশের মোট ভূমির প্রায় ১৭.৪%। এর মধ্যে প্রায় ৪ লাখ হেক্টর জমি বন্যপ্রাণীদের জন্য সংরক্ষিত।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি) এলাকায় ৫০০ শয্যার বহু-বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ নির্মাণের খবর প্রকাশিত হলে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
সিআরবি এলাকাটি সংরক্ষিত বলে সেখানে হাসপাতালের নির্মাণ কার্যক্রম ঠেকাতে আগস্টে চট্টগ্রামের সিভিল সোসাইটির সদস্যরা গণস্বাক্ষর কর্মসূচি চালায়।
২৫ আগস্ট গণস্বাক্ষর কর্মসূচির উদ্বোধনের সময় চট্টগ্রাম সিভিল সোসাইটির চেয়ারম্যান ড. অনুপম সেন বলেন, “চট্টগ্রামের স্বার্থে সিআরবিকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। সিআরবির মতো সংক্ষিত এলাকা ধ্বংস করার অধিকার কারোর নেই। চট্টগ্রামের মানুষ সিআরবির প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করে শহীদদের কবরে কোনো বেসরকারি হাসপাতাল চায় না।”
তিনি আরও বলেন, “চট্টগ্রামের মানুষ সিআরবির মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সমৃদ্ধ একটি ঐতিহাসিক জায়গার ধ্বংসকে কোনোভাবেই মেনে নেবে না।”
এর আগে আগস্টে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বন্দরনগরীর প্রাকৃতিক অক্সিজেনের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত সিআরবি এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রতিহত করার প্রতিশ্রুতি দেন।
যদিও জুনে প্রকল্প প্রধান এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু/পূর্ব) মোহাম্মদ আহসান জাবির পরিবেশগত নির্দেশিকা অনুসরণ করে মোট ছয় একর জমির উপর হাসপাতালটি নির্মাণের কথা জানিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, “আমরা মানুষের চাহিদা পূরণের জন্য এই বহু-বিশেষায়িত হাসপাতালটি নির্মাণ করছি। নির্মাণের সময়ে কিছু ছোট গাছ কাটা হতে পারে। তবে প্রকল্পের এলাকায় কোনো শতবর্ষী গাছ নেই। তবে আমরা যদি এ ধরনের কোনো গাছ খুঁজে পাই, তাহলে আমরা তা কেটে ফেলব না বরং নকশায় অন্তর্ভুক্ত করব।”
মতামত দিন