রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের (রবি) শিক্ষার্থীরা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির আশ্বাসে শনিবার (২ অক্টোবর) অবরুদ্ধ প্রশাসনিক ভবন খুলে দিয়েছেন। তবে চুল কেটে দেওয়া ওই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র শামীম হোসেন বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। তিনি আমাদের অভিযোগের কথা শুনেছেন। আমাদের আন্দোলনের কারণ জানতে চেয়েছেন। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, তোমাদের প্রতি যেটা করা হয়েছে সেটা অন্যায়। তদন্ত সাপেক্ষে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষামন্ত্রীর কথায় আশ্বস্ত হয়ে প্রশাসনিক ভবনের তালা খুলে দিয়েছি। তবে আমরা একাডেমিক ভবনে অবস্থান করছি। সোমবার তদন্ত শেষ হবে। তদন্তের প্রতিবেদন পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করবো। তদন্তে যদি আমাদের ওপর ন্যায় বিচার করা হয়, তবেই আন্দোলন থেকে বের হবো আমরা। না হলে সোমবার থেকে আবারও আন্দোলন শুরু হবে।”
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান ও রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস বলেন, “তদন্ত চলছে। আগামী রবিবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। অনেক ডকুমেন্ট সংগ্রহ করছি। তদন্ত কমিটির অগ্রগতি দেখে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে কিছুটা শিথিলতা আনছে। তারা স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে অন্দোলন করছে। তবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সিদ্ধান্ত হবে। এরপর কি হবে তা বলা যাচ্ছে না।”
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোহরাব হোসেন বলেন, “আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে আমাদের প্রশাসনিক ভবন খুলে দিয়েছে। আমরা আমাদের প্রশাসনিক কাজকর্ম ইতোমধ্যে শুরু করেছি। তবে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান করছে।”
প্রসঙ্গত, ২৬ সেপ্টেম্বর (রবিবার) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার হলে প্রবেশের সময় ১৪ জন শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেন বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। অপমান সহ্য করতে না পেরে ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে নাজমুল হাসান তুহিন নামে এক শিক্ষার্থী “অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার” চেষ্টা করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা সকল পরীক্ষা বর্জন করে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক ভবনে তাল ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ করে। ওইদিন রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান, সহকারী প্রক্টর ও সিন্ডিকেট সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। ঘটনার তদন্তে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।
পরে ওই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে আমরণ অনশন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। অবশেষে এ অচলাবস্থা নিরসনে বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে সিন্ডিকেট মিটিং শেষে শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষা স্থগিত এবং একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য ঘোষণা করা হয়। এরপরও প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্যসহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে আন্দোলন চালিয়ে যায় শিক্ষার্থীরা।
মতামত দিন