ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম পুষ্পসহ তিন জনের বিরুদ্ধে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে মারপিট, শ্লীলতাহানির চেষ্টা ও ভ্রূণ হত্যার অভিযোগ এনে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম পুষ্পসহ তিন জনের বিরুদ্ধে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে মারপিট, শ্লীলতাহানির চেষ্টা ও ভ্রূণ হত্যার অভিযোগ এনে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শুক্রবার (০১ অক্টোবর) অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতের নির্দেশক্রমে হরিপুর থানা পুলিশ মামলাটি গ্রহণ করে।
এর আগে গত ২১ মার্চ ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে বাদী হয়ে তিন জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন ওই গৃহবধূর স্বামী রব্বানী (২৮)।
আসামিরা হলেন- উপজেলার বকুয়া ইউনিয়নের বকুয়া গ্রামের মৃত আমিনুল ইসলামের ছেলে ও হরিপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম পুষ্প, নন্দগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে আবুল কালাম (৪০) ও গজধুমডাঙ্গী গ্রামের তফিজ উদ্দিনের ছেলে ফিরোজ (৩০)।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ১৮ জানুয়ারি হরিপুর উপজেলার নন্দগাঁও মুন্সিপাড়া গ্রামের রব্বানীর স্ত্রী ও তার মা বাসার পাশে জমিতে গরু-ছাগল আনতে যান। এ সময় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে নন্দগাঁও (গনাগাছি) গ্রামের আবুল কালাম তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। পরে এর প্রতিবাদ করতে গেলে আব্দুল কাইয়ুম পুষ্প তার গাড়ি থেকে নেমে এসে ওই গৃহবধূর পেটে লাথি মারেন। এ ছাড়াও তার সঙ্গে থাকা ফিরোজ ও কালাম অন্তঃসত্ত্বা ওই গৃহবধূকে মারপিট করে ও শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে।
এ সময় প্রাণে বাঁচতে ওই গৃহবধূ চিৎকার করলে আশেপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পুষ্প, কালাম ও ফিরোজ চলে যান। পরে ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে যান পরিবারের অন্য সদস্যরা। ১৯ জানুয়ারি গৃহবধূর পেটের ব্যথা বেড়ে গেলে তাকে হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে নিতে বলেন। পরে সেখানে চিকিৎসকের পরামর্শে আলট্রাসনোগ্রাম করে দেখা যায় ওই গৃহবধূর পেটের বাচ্চা (ভ্রূণ) নষ্ট হয়ে গেছে। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক পেট থেকে নষ্ট ভ্রূণ বের করেন।
গৃহবধূর স্বামী রাব্বানী অভিযোগ করে বলেন, “বিনা কারণে তারা আমাদের জমি দখলের চেষ্টা করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। আমার মা ও বউ সেদিন বাসার পাশে জমিতে গরু-ছাগল আনতে গেলে তারা একটা ঝগড়া লাগিয়ে এমন ঘটনা ঘটায়। আমার বউ ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। তার পেটে লাথি মারছে, মোটরসাইকেল তুলে দিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যায়। আমি এর বিচার চাই। আমার সন্তানকে তারা হত্যা করেছে।”
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, “দিলারার চিকিৎসা শেষে হরিপুর থানায় মামলা করতে গেলে আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে পুলিশ মামলা গ্রহণ করে নাই। পরবর্তীতে এ বছরের ২১ মার্চ ঠাকুরগাঁওয়ের বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন।”
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে হরিপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম পুষ্প বলেন, “কথিত ঘটনার সময় আমি স্পট থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে হরিপুর কারবালার মাঠে একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। ঐ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, হরিপুর ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
ঘটনাটি সম্পূর্ণ সাজানো এবং মিথ্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যদি তাই হয় তাহলে এতো বড় হেনস্থার ঘটনায় মামলা হতে ১০ মাস বিলম্ব কেন হবে?”
উল্লেখ্য, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম পুষ্পর বিরুদ্ধে হরিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় অফিস ভাঙচুর ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের একটি মামলা রয়েছে।
হরিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুল ইসলাম বলেন, “ওই গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। সেটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মতামত দিন