আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিষয় হওয়ায় প্রয়োজনে ভারতের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলে সরকারকে কার্যকর সমাধান বের করার পরামর্শ পরিবেশবিদদের
ভারতীয় সীমান্তবর্তী উপজেলা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার তিনটি গ্রামের মানুষের জীবন-জীবিকা এখন হুমকির মুখে। কারণ সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা বালি-পাথর। বালির আস্তরণ পড়ে তলদেশ ভরাট হওয়ার পাশাপাশি অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডের ফলে টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্যও এখন ঝুঁকির মুখে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ কামনা করেছেন।
সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারী বর্ষণে প্রতি বছরই পাহাড় ধস হয় ভারতের মেঘালয়ে। এ কারণে ঢলের পানির সঙ্গে নিচু এলাকায় নেমে আসে বালি-পাথর। এক যুগ ধরে চলে আসা এ সংকটে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে বালি-পাথরের নিচে চাপা পড়েছে হাজার একর কৃষি জমি। নিঃস্ব হয়েছে চানপুর, রজনীলাইন ও রাজাই গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার। সর্বশেষ গত ১৬ আগস্ট বড় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে সীমান্তের ওপারে।
তাহিরপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সাম্প্রতিক ঢলে নেমে আসা বালি-পাথরের চাপে চানপুর গুচ্ছগ্রামের ১৫টি ঘর মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। কয়েকটি পরিবারের ৫০-৬০ জন সদস্য রয়েছে অন্যের আশ্রয়ে। সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা ৪০ ফুট প্রস্থ ও ১১ ফুট গভীরের ‘‘নয়াছড়া’’ খালটি বালি ও পাথরে ভরাট হয়ে গেছে। খালের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ায় এর পাশ দিয়ে নির্মিত সড়কের প্রায় পুরোটাই ভেঙে গেছে।
তাহিরপুরে বালিতে ভরাট হয়ে যাওয়া বাড়িঘর, পুকুর ও ফসলের মাঠ
চানপুর এলাকায় ব্রিজের নিচের বয়ে যাওয়া খালটি পরিণত হয়েছে বালির সড়কে। পাহাড়ি ঢলে ১৫টি মাছ চাষের পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। পানিমিশ্রিত বালির স্রোত বস্তা দিয়ে ঠেকিয়ে সবুজ ফসলের চারা আগলে রেখেছেন কৃষক। তবুও অনেক ফসলী মাঠ বালিচাপা পড়েছে।
স্থানীয় কৃষক আবদুল খালিক জানান, তার এক কেদার (৩০ ডেসিমেল) কচুক্ষেত, দুই কেদার ফসলী জমি ও পুকুরের মাছ বালির নিচে চাপা পড়েছে। সব মিলিয়ে অন্তত ৪০০ একর জমি এবার নতুন করে বালি ও পাথরে ঢাকা পড়েছে।
ওই গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব বাসিন্দা মো. ফজলু মিয়া জানান, তার ৮ কেদার জমির মধ্যে চাষ করা ৫ কেদার জমি বালিতে ভরে গেছে। এ অবস্থায় ৮ সদস্যের পরিবার নিয়ে তিনি চরম কষ্টে দিনযাপন করছেন।
সুনামগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ফরিদুল হাসান জানান, বালির আস্তরণ পড়ে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী তিনটি গ্রাম ও একটি বিলের ৩৫০ হেক্টর ভূমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বেসরকারি হিসেবে ক্ষতির শিকার জমির পরিমাণ প্রায় ৫০০ হেক্টর।
ঢলের বালি আর পাথরে মাঠ-বাড়ি-ঘর ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেখানকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে সেখানকার জলাশয়ের বিভিন্ন ধরনের মাছ, সাপসহ অন্য প্রাণী হয় মরে গেছে না হয় বাসস্থান পরিবর্তন করেছে। জীববৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাবের কারণে কৃষকরাও ফসল ফলাতে পারছেন না।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর, সিলেটের পরিচালক এমরান হোসেন জানান, সীমান্ত থেকে বালু-পাথর নেমে আসার বিষয়টি খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর বিষয়।
তাহিরপুরের বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান তিনি।
তাহিরপুরে বালিতে ভরাট হয়ে যাওয়া ব্রিজের তলদেশ
চানপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানান, মেঘালয়ের পাহাড়গুলো থেকে নিয়মিত কয়লা ও পাথর তোলার কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ২০০৮ সালে বর্ষা মৌসুমে হঠাৎ পাহাড় ধসে এলাকার বিপুল পরিমাণ ভূমি বালির নিচে চাপা পড়ে যায়। এখনও ছড়া দিয়ে প্রতিনিয়ত সেই বালি ও নুড়ি পাথর আসছে। ফলে ওই এলাকার কোনো জমিতে আর ফসল হয় না। অভাবের কারণে অনেক পরিবার অন্যত্র চলে যাচ্ছে।
আক্তার বানু নামের এক নারী জানান, ঘর-বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় আমরা নিঃস্ব। এখন দেশ ছেড়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। এরই মধ্যে অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে বলেও জানান তিনি, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি আদিবাসী পরিবারও রয়েছে।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী রজনীলাইন গ্রামের বাসিন্দা, বাংলাদেশ আদিবাসী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সদস্য এন্ড্রু সলোমর (৫৫) জানান, মেঘালয়ের পাহাড়ে ডিনামাইট কয়লা,পাথর উত্তোলন করায় পাহাড় ধসের ঘটনা বাড়ছে। আর ক্ষতিতে পড়েছে পাদদেশের রজনীলাইন, বড়ছড়া, বুরুঙ্গা ছড়া, রাজাইছড়া, লাকমা ছড়া, গারোছড়া, জঙ্গলবাড়ী ছড়া প্রভৃতি এলাকা। একই সঙ্গে কয়লা মিশ্রিত পানিতে অতিরিক্ত সালফার, জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে।
তিনি জানান, টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পের রেস্ট হাউজের মাথার ওপর মেঘালয়ের লাইলেড এলাকায় এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে যেভাবে পাথর ও চুনা পাথর উত্তোলন হচ্ছে, তা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
বালি-পাথরে তার ৩০ একর ফসলি জমি ভরাট হয়ে যাওয়ার কথা বলে এন্ড্রু সলোমর জানান, বালুর প্রভাব পড়েছে সেখানকার জীববৈচিত্র্যেও। কাঁকড়া নেই, মাছ নেই, সাপও চলে যাচ্ছে, থাকতে পারছে না অন্য কোনো প্রাণীও। শীতকালে পুরো এলাকা শুষ্ক হয়ে যায়। আর বর্ষাকালে কিছু ছড়া ভয়ংকর রূপ নেয়।
তাহিরপুরে বালি-পাথরে ভরাট হয়ে যাওয়া বাড়িঘর। ছবি: ঢাকা ট্রিবিউনতিনি আরও জানান, বালিতে ভরাট হয়ে গেছে সেখানকার পঁচাশোল বিল। এ বিষয়ে ২০০৮ সাল থেকে তিনি বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি চালাচালি করে এলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। সম্প্রতি তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের সুপারিশ সম্বলিত একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দিয়েছেন।
তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড় দল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জানান, ওই তিন গ্রামে প্রায় ১২০০ পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে আদিবাসী পরিবার রয়েছে প্রায় ১০০টি। বালুর কারণে প্রায় ৭০০-৮০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সময় বর্ষায় হাওরে ঢেউ থাকত। ছোট-বড় সকল হাওরই বর্ষায় বেশিরভাগ সময় উত্তাল থাকত। ঢেউয়ের ভাঙন থেকে বাড়িঘর রক্ষা করতে চৈত্র্যের শেষদিক থেকেই প্রস্তুতি শুরু করতেন স্থানীয়রা। নলখাগড়া আর বাঁশ দিয়ে শক্ত করে বাড়ির সামনে দেওয়া হতো আড় বা বাঁধ। প্রবল ঢেউ একসময় এগুলো ভেঙে ভাসিয়ে নিয়ে যেত। এরপর কচুরিপানা দিয়েও আবার ঢেউয়ের মোকাবিলা করার চেষ্টা চলত। ঢেউয়ের ভয়ে অনেক সময় হাওরে নৌকা চালাতেও ভয় পেতেন মাঝিরা। প্রবল ঢেউয়ে কত পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন তারও হিসেব নেই। কালের বিবর্তনে হাওরের সেই রাক্ষুসে রূপের পরিবর্তন ঘটেছে।
হাওর এলাকার বাসিন্দা ইজাজুল ইসলাম খান সেই দিনগুলোর কথা মনে করতেই আঁতকে ওঠেন। তিনি বলেন, ‘‘ঢেউয়ে বাড়ি ভেঙে নিয়ে যেত। তখন নিরূপায় হয়ে অন্য বাড়িতে আশ্রয় নিতাম। কার্তিক মাস এলে নৌকায় করে মাটি এনে আবার ভেঙে যাওয়া জায়গা ভরাট করতাম। এভাবেই হাওরের ঢেউ আর আফালের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছি। তবে গত কয়েক বছর ধরে আর সেই ঢেউ দেখা যায় না।’’
সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা বালি ও প্রতি বছরের হাওর রক্ষা বাঁধের কারণে হাওরের তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকার, শীতকালে ফাঁদ পেতে নির্বিচারে অতিথি পাখি হত্যা, সারিবদ্ধ হিজল-করচ গাছ কেটে উজাড়, ইঞ্জিনচালিত নৌকায় হাওরে অবাধ বিচরণ ও পর্যটকদের ফেলে যাওয়া প্লাস্টিক বর্জ্য সামগ্রীতে হুমকির মুখে পড়ছে টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য।
হাওর পাড়ের বাসিন্দা শিক্ষক নীহার রঞ্জন তালুকদার বলেন, ছোটবেলায় টাঙ্গুয়ার হাওরে অনেক বড় বড় মাছ দেখতাম, শীতকালে পাখির কলতানে ঘুম ভাঙত। এখন এসবের কিছুই নেই।
তাহিরপুর উপজেলা “হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও” আন্দোলনের আহ্বায়ক গোলাম সারোয়ার লিটন বলেন, “নানা কারণে দিন দিন টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।”
টাঙ্গুয়ার হাওর ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ কবির বলেন, ‘‘আমাদের ব্যবস্থাপনা কমিটির লোকজনকে ফাঁকি দিয়েই হাওরের মাছ ও পাখি শিকার করা হয়। প্রশাসনের লোকজন অনেক সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জাল ও পাখি শিকারিদের জরিমানা করেন।’’
তাহিরপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রায়হান কবির জানান, “টাঙ্গুয়ার হাওর নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন খুবই সচেতন। শিগগিরই নৌ-পুলিশ আসবে। টাঙ্গুয়া নিয়ে একটি প্রকল্প ছিল। প্রকল্প চলে যাওয়ার পর একটু শিথিলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।”
হাওরটিকে ইনক্লুসিভ পদ্ধতিতে আনার চেষ্টা করার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, “নানা কারণে হাওরের পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে এবং জীববৈচিত্র্যেও এর প্রভাব পড়ছে। রামসার সাইটের নীতিমালা এবং বনের গাছ কাটা রোধে একটি স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি ওয়ার্কপ্ল্যান করা হচ্ছে। সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি কর্মপরিকল্পনা করা হবে।”
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, ঢলের পানির সাথে নেমে আসা বালি অকশন (নিলাম)-এর মাধ্যমে অপসারণ করা হবে। বালুর পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য পাউবো এর নির্বাহী প্রকৌশলী, আরডিসি, তাহিরপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও একজন সার্ভেয়ারকে দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা এরই মধ্যে এলাকা ঘুরে এসেছে। তারা সেখানে ২ লাখ ৭০ হাজার ঘনফুট বালু থাকার প্রাথমিক সমীক্ষা করেছে।
তিনি আরও জানান, কয়েকদিন আগে ফের বালু এসেছে। সেজন্য তারা আবারও এলাকা পরিদর্শন করবেন। বালুর সরকারি দাম নির্ধারণ করে নিলাম করা হবে। যারা সর্বোচ্চ দরদাতা হবে, তাদেরকে কার্যাদেশ দেওয়া হবে।
এক মাসের বালু সরিয়ে ফেলার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি জানান, নভেম্বরে কৃষক যাতে তার জমি চাষাবাদের সুযোগ পায়, সেই ব্যবস্থা করা হবে।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ওই এলাকা পরিদর্শনের একটি প্রাথমিক সমীক্ষা রিপোর্ট জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দিয়েছেন।
হাওর এলাকার পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলো থেকে বহুবার বালু সমস্যার সমাধানের জন্য নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে এ নিয়ে চিঠি দিয়ে সমাধানের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ চাওয়া হলেও সমস্যার সমাধান না হয়ে দিনকে দিন তা আরও বাড়ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা আক্তার ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় ধসে পতিত বালু ও পাথরের কারণে মোট ক্ষতি নিরূপণ, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষিজমি পুনরুদ্ধার করতে কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
তার মতে, যেহেতু সমস্যাটি আন্তঃরাষ্ট্রীয় তাই দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধানের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ প্রয়োজন।
হাওর গবেষক, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কবি কাসমির রেজা বলেন, ‘‘চানপুরে বালি বন্যা ও রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত বর্জ্যের কারণে হাওরের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। হাওরের ও নদীর সম্পদ নষ্ট হওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবন ব্যাহত হচ্ছে। আমরা চাই সরকার দ্রুত এর সমাধান করে হাওর অঞ্চলের মানুষকে এ দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করবে। এটি যেহেতু আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিষয় তাই আমরা চাই সরকার প্রয়োজনে ভারতের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলে কার্যকর সমাধান বের করবে।’’
তিনি জানান, ভারত থেকে আসা বালিতে এরই মধ্যে ভরাট হয়ে গেছে পচাশোল বিল। পচাশোল থেকে মাত্র ৫-৬ কিলোমিটার দূরত্বে টাঙ্গুয়ার হাওরের অবস্থান। ওপারের বালু টাঙ্গুয়ার জীব বৈচিত্র্যেও বিশেষ প্রভাব ফেলছে বলে জানান তিনি।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকও দুই দেশের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহার ওপর জোর দিয়েছেন।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২০০৮ সালের ২৪ নভেম্বর মেঘালয়ের পাহাড় ধসের ফলে নির্গত বালি ও পাথরের কারণে আবাদি জমি নষ্ট এবং পরিবেশ বিপর্যয় রোধে কূটনৈতিক ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে চিঠি দেয়। কিন্তু এ ব্যাপারে আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, ২০০৮ সালের নভেম্বরে তৎকালীন সুনামগঞ্জ ১৭ রাইফেলস ব্যাটালিয়ন ও ভারতের শিলং ৮৩ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেওয়া স্মারকলিপিতে মেঘালয় পাহাড়ে অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় খোড়া বন্ধের জন্য বলা হয়।
মতামত দিন