এ ঘটনায় সোমবার রাতে প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান এবং সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের বিরুদ্ধে ১৪ শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের রাষ্ট্র বিজ্ঞান পরিচিতি বিষয়ের ফাইনাল পরীক্ষার হলে প্রবেশের সময় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী লজ্জায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে বলেও জানা যায়। বর্তমানে তিনি এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জানা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষক কিছুদিন আগে ক্লাস চলাকালে চুল বড় রাখার বিষয়ে ছাত্রদের সতর্ক করেন। তার ভয়ে পরদিনই সবাই চুল ছোট করে। পরীক্ষার হলে ঢোকার সময় আগে থেকেই দরজার সামনে ওই শিক্ষক কাঁচি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যাদের চুল মুঠোর মধ্যে ধরা গেছে, তাদের মাথার সামনের বেশ খানিকটা চুল তিনি কেটে দেন। সবার সামনে এভাবে তাদের লাঞ্ছিত করার পর জোর করে তাদের পরীক্ষা দিতেও বাধ্য করেন তিনি।
সোমবার দুপুরে ওই বিভাগের পরীক্ষা শুরুর আগে এ ঘটনার প্রতিবাদে পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের উদ্দেশ্যে বিসিক বাসস্ট্যান্ড এলাকার রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস-১ এর ফটকে জড়ো হন। এ সময় একটি পক্ষ তাদের পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে ও চাপ দিয়ে সবাইকে পরীক্ষার হলে যেতে বাধ্য করে।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, চুল কাটার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় সোমবার দুপুরে তুহিনকে ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন এই শিক্ষক।
পরে এদিন পরীক্ষা শেষে তিনি দ্বারিয়াপুরের শাহ মুখদুম ছাত্রাবাসের ৫ম তলার নিজ কক্ষে দরজা বন্ধ করে ৩৫টি ঘুমের বড়ি এক সঙ্গে গুঁড়া করে খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বিষয়টি তার সহপাঠীরা টের পেয়ে তাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে।
এদিকে, ওই শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার চেষ্টার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এদিন রাত ১১টার দিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে ভিড় করেন। এ সময় তারা এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দোষী ওই শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী ও অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল বলেন, ‘‘ঘটনাটি গতকাল ঘটেছিল। তারপরে আবার সমাধানও নাকি করা হয়েছিল। কিন্তু ওই শিক্ষক ক্লাস রুমে শিক্ষার্থীদের নাকি আবারও বকাবকি করেন। এ ঘটনায় আজ রাতে একজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করে। বর্তমানে সে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে বলে শুনেছি।’’
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ও ভিসির অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত আব্দুল লতিফ বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই। কোনও লিখিত অভিযোগও পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মতামত দিন