প্রকাশ্যে এ বিষয়ে কেউ মুখ না খুললেও প্রতিষ্ঠানটির ৫৪ জন মাঠকর্মীর সই করা একটি অভিযোগপত্র বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত একটি প্রশিক্ষণের নামে ৫৩ লাখ ৯৪ হাজার ৬৯৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগের প্রমাণ সংযুক্ত করে স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন দপ্তর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠিও পাঠিয়েছেন হাসপাতালটির কর্মীরা।
অভিযুক্তরা হলেন- উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজমুল আলম, প্রধান সহকারী শাহ আলম ও ইপিআই টেকনিশিয়ান নিজাম উদ্দিন মজুমদার।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের ৬৬টি ওয়ার্ডের জন্য প্রায় ৩৪ লাখ ২ হাজার ৮০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। বরাদ্দ বিবরণী অনুযায়ী, প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে উপজেলা সদরের তিনটিসহ মোট ২৫টি দল টিকাদানকারী হিসেবে প্রশিক্ষণ শেষে অত্র এলাকাগুলোয় কাজ শুরু করার কথা ছিলো।
কিন্তু কোনো প্রশিক্ষণ না দিয়েই টিকাদানকারী ও স্বেচ্ছাসেবকদের থেকে “প্রশিক্ষণ নিয়েছেন” মর্মে সই নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, আরও অনেক খাত মিলিয়ে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০২০-২১ অর্থ বছরে কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচি, এমআর ক্যাম্পেইনসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণের জন্য ৫৩ লাখ ৯৪ হাজার ৬৭০ টাকা বরাদ্দ এসেছিল। এই টাকার পুরোটাই খরচ দেখিয়ে উত্তোলন করেছেন অভিযুক্ত তিন কর্মকর্তা। ফলে কোভিড মহামারির সময় অক্লান্ত পরিশ্রম করলেও প্রশিক্ষণের ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন হাসপাতালে কর্মরত নার্স, স্বাস্থ্য সহকারী, স্বেচ্ছাসেবকেরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকাশ্যে এ বিষয়ে কেউ মুখ না খুললেও ৫৪ জন মাঠকর্মীর সই করা একটি কাগজ অভিযোগের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, “প্রধান সহকারী শাহ আলম ক্ষমতাবলে গত ১৩ বছর এই হাসপাতালে আছেন। এই সময়ে ডাক্তার, নার্স, মাঠ পর্যায়ে কর্মচারীসহ যারাই মাতৃত্বকালীন ছুটি ও যোগদান, বদলির নোটিশ বা টাইমস্কেল বিলের কোনো অফিসিয়াল কাজে তার কাছে যেতেন তাদেরই দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হতো শাহ আলমকে।”
জানা যায়, প্রতি মাসে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে কমপ্লেক্সের আয়া রহিমা বেগম, আট বছর কর্মস্থলে না এসেও নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন।
অভিযুক্ত ইপিআই টেকনিশিয়ান নিজাম উদ্দিন মজুমদারের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ইউএইচও) নাজমুল আলম স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনিই সব বলতে পারবেন।
অপর অভিযুক্ত প্রধান সহকারী শাহ আলম জানান, হাসপাতালের টাকা আত্মসাতের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাছাড়া কেউ এ বিষয়ে আমার কাছ থেকে কিছু জানতেও চায়নি।
মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজমুল আলম বলেন, “কোনো প্রকার দুর্নীতির বিষয়ে আমার জানা নেই। বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পাচ্ছি হাসপাতালের দুজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে নাকি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।”
এ বিষয়ে কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসেন বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
মতামত দিন