ফেসবুকের কল্যাণে ৭০ বছর পর বাড়ির ঠিকানাসহ প্রিয়জনদের খুঁজে পেয়েছেন কুদ্দুস
কিশোর বয়সে হারিয়ে গিয়েছিলেন আব্দুল কুদ্দুস মুন্সী। তারপর কেটে গেছে ৭০ বছর। কুদ্দুস জানতেন না তার বাড়ি কোথায়। শুধু জানতেন গ্রামের নাম। এর সূত্রে ধরেই অবশেষে ফেসবুকের কল্যাণে ৭০ বছর পর বাড়ির ঠিকানাসহ প্রিয়জনদের খুঁজে পেয়েছেন কুদ্দুস।
শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) তিনি আসেন তার আপন ঠিকানায়।
কুদ্দুস মুন্সী এখন রাজশাহীর বাঘমারা উপজেলার বারুইপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বাড্ডা গ্রামের ছেলে। তাকে খুঁজে পাওয়ার পর স্বজনরা জানান, ছেলের আশায় এখনও পথ চেয়ে আছেন আব্দুল কুদ্দুসের শতবর্ষী মা। ৭০ বছর পর শনিবার দেখা হয় মা-ছেলের।
আব্দুল কুদ্দুসের স্বজনরা জানান, এখনও জীবিত আছেন তার শতবর্ষী মা ও এক বোন। এরই মধ্যে মায়ের সাথে ভিডিও কলে কথাও বলেছেন আব্দুল কুদ্দুস। আর এত বছর পর নিজের পরিবার খুঁজে পাওয়ায় খুশি আব্দুল কুদ্দুসের স্ত্রী-সন্তানরাও।
কুদ্দুসের চাচাত ভাইয়ের নাতি শফিকুল ইসলাম জানান, গত ১২ এপ্রিল কুদ্দুস মুন্সীর পাশের গ্রামের আইয়ুব আলী নামে পরিচিত এক ব্যক্তির ফেসবুকে এক পোস্টে কুদ্দুসের খবর জানতে পারেন তিনি। সেখানে শুধু কুদ্দুসের বাবা-মা ও গ্রাম বাড্ডার নাম ছিল। এরপর আমরা আইয়ুব আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করে আব্দুল কুদ্দুসকে খুঁজে পাই। কুদ্দুস মুন্সীর ভাগ্নেসহ আমরা চারজন গত ২১ সেপ্টেম্বর তার রাজশাহীর বাড়িতে আসি।
শফিকুল ইসলাম আরও জানান, কুদ্দুসরা তিন ভাইবোন ছিলেন। এখনও জীবিত আছেন কুদ্দুসের মা মঙ্গলেমা বিবি (১১০) ও এক বোন। ২১ সেপ্টেম্বর মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছেন কুদ্দুস।
কুদ্দুস বলেন, “আমি আমার চাচার সঙ্গে বাঘমারা থানায় বেড়াতে আসি। চাচা ছিলেন থানার দারোগা। তিন দিন চাচার সঙ্গে ছিলাম। সেখানে ভাল লাগছিল না। এজন্য বেড়াতে বের হয়ে হারিয়ে যাই। হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই আত্রাইয়ের সিংসাড়া গ্রামে। ওই গ্রামের সাদেক আলীর বাড়িতে আশ্রয় পাই এবং সেখানেই বড় হই। পরে বাঘমারা বারুইপাড়া গ্রামে বিয়ে করে সেখানে সংসার শুরু করি।”
কুদ্দুসের তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ে রয়েছে। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। দুই ছেলে থাকেন বিদেশে। আর এক ছেলে বাড়িতে আছেন বলে জানান কুদ্দুস।
কুদ্দুস বলেন, “আমি আমার মায়ের সঙ্গে যখন ভিডিও কলে প্রথম কথা বলি তখন আমার মা আমাকে বলে, তুই আমার হারিয়ে যাওয়া আব্দুল কুদ্দুস, বাবা। তোর ছোটবেলায় হাত কেটে গিয়েছিল। মায়ের মুখে এ কথা শোনার পর আমি বলি, মা তোর কুদ্দুসের কোন হাত কেটে গিয়েছিল? তখন মা বলে, বাম হাতের বুড়ো আঙ্গুল কেটে গিয়েছিল। তখন আমি বুঝতে পারি যে তিনিই আমার মা।”
আইয়ুব আলী বলেন, “বারুইপাড়া বাজারের মোড়ে এক চায়ের দোকানে বসে ৭০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়ার গল্প বলছিলেন আব্দুল কুদ্দুস মুন্সি। তার গল্পটি ফোনে রেকর্ড করে গত ১২ এপ্রিল আমার ফেসবুক পেইজে আপলোড করি। পোস্টে লিখেছিলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার এই বৃদ্ধ আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে হারিয়ে মা-বাবা থেকে বিচ্ছিন্ন।”
বহু মানুষ সেই পোস্ট শেয়ার করেন জানিয়ে আইয়ুব বলেন, “বিদেশে কিছু মানুষ আমার ফ্রেন্ড লিস্টে আছেন। তারা দেখেন সেটা। তারপর ওই এলাকার মানুষ ফেসবুকে আব্দুল কুদ্দুসের ভিডিও দেখে যোগাযোগ করেন।”
মতামত দিন