২১ সেপ্টেম্বর ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া ৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতি ৩২ ঘণ্টা পর ২২ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টায় প্রত্যাহার করা হয়
১৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষে বেনাপোল বন্দরে ২১ সেপ্টেম্বর ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া ৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতি ৩২ ঘণ্টা পর ২২ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টায় প্রত্যাহার করা হয়েছে। পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল শুরু হলেও বেনাপোল বন্দর এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে ট্রাকজট।
এ কর্মবিরতির ডাক দেয় বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান, প্রাইমমুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ট্রাক চালক শ্রমিক ফেডারেশন। তার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে যশোর জেলা ট্রাক মালিক সমিতি, বেনাপোল ট্রাক মালিক সমিতি ও ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতি।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল বলেন, “কর্মবিরতি প্রত্যাহারে বেনাপোল বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন ও বন্দরের কার্যক্রম সচল হয়েছে। কর্মবিরতিতে ব্যবসায়ীরা পণ্য পরিবহন করতে না পারায় বাণিজ্য কার্যক্রম ব্যাহত হয়।”
বন্দর শ্রমিকরা জানান, তারা বন্দরে কাজ করে সংসার চালায়। কিন্তু কর্মবিরতিতে বন্দর থেকে আমদানি পণ্য খালাস না হওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছেন।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, ট্রাক মালিক সমিতির ডাকা কর্মবিরতি প্রত্যাহার হওয়ায় বেনাপোল বন্দর থেকে পণ্য লোড হচ্ছে। বন্ধের কারণে বন্দর এলাকায় পণ্যজট রয়েছে। এ কারণে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে স্থান সংকট হওয়ায় দুই সপ্তাহ ধরে বেনাপোল বন্দরে আটকে আছে প্রায় দুই হাজার পণ্যবাহী ট্রাক। এ অবস্থায় রপ্তানি পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতিদিন পণ্য নিয়ে শত শত ট্রাক বেনাপোল বন্দরে এলেও সেগুলো ভারতে প্রবেশ করতে পারছে না।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে পরিমাণ পণ্যবোঝাই ট্রাক ভারতে রপ্তানির জন্য আসছে তার অর্ধেক ট্রাক ভারতে যাওয়ার অনুমতি না মেলায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে বন্দর এলাকায়। প্রতিদিন ৪০০ পণ্যবোঝাই ট্রাক বেনাপোল এলেও ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের জায়গা সংকটের কারণ দেখিয়ে তারা প্রতিদিন মাত্র ৯০-১০০ ট্রাক যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে। এ কারণে প্রতিদিন বেনাপোল বন্দরে রপ্তানি পণ্যবোঝাই ট্রাকের জট সৃষ্টি হচ্ছে। এতে রপ্তানি বাণিজ্যেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ সব ট্রাক সময়মতো গন্তব্যে না পৌঁছায় ক্ষতি হচ্ছে রপ্তানিকারকদের।
এদিকে রপ্তানি পণ্যের এসব ট্রাক রাখার মতো টার্মিনাল বা স্থান বেনাপোল বন্দরেও নেই। এ কারণে বন্দরের আশপাশের শাখা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে ট্রাকগুলো। এতে বন্দর এলাকায় ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কে ট্রাকের জটলার কারণে বেনাপোল চেকপোস্ট রপ্তানি গেট থেকে শার্শা উপজেলা সদর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়কে স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে।
স্থানীয় সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ভারত প্রতিদিন বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ৩৫০ থেকে ৪০০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি করলেও বাংলাদেশি পণ্য নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা বরাবরই নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। ভারত আগে পণ্যবোঝাই ১৫০ থেকে ২৫০ ট্রাক গ্রহণ করলেও বর্তমানে ৯০ থেকে ১০০ ট্রাক গ্রহণ করছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা বিরাজ করলেও সমস্যা নিরসনে প্রশাসনের কোনও উদ্যোগ নেই।
তারা আরও জানান, আটকে থাকা রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাকের কারণে বেনাপোল এলাকার বিভিন্ন সড়কে রিকশা-ভ্যানও যাতায়াত করতে পারছে না। অনেকে শার্শা সদর থেকে হেঁটে চেকপোস্টে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষ করে রোগী, নারী ও শিশুদের কষ্টের শেষ নেই। এ অবস্থায় বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠন সভা করে এবং কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরে রপ্তানি বাণিজ্য রাত ১১টা পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে, তবু সমস্যা মেটেনি।
বন্দর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ওপর যত্রতত্র পণ্যবোঝাই প্রায় দুই হাজার ট্রাক ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। জায়গার অভাবে বেনাপোল বন্দর অভ্যন্তরে ট্রাকগুলো রাখা সম্ভব হচ্ছে না। জায়গা না থাকায় ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দর থেকে আমদানি পণ্যবোঝাই ট্রাকও বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছে না।
বেনাপোল ট্রাক মালিক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহীন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে সয়াবিনের ভুসি, পাট ও পাটজাত দ্রব্য এবং গার্মেন্টস, সাবান, ব্যাটারি, গার্মেন্টস ঝুট ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। প্রতিদিন এসব পণ্য নিয়ে প্রায় ৪০০ ট্রাক ভারতে প্রবেশের জন্য বেনাপোল বন্দরে আসছে। কিন্তু পেট্রাপোল বন্দরে যেতে না পারায় বেনাপোল বন্দর এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া বেনাপোল বন্দরে রপ্তানি পণ্যের ট্রাক রাখার কোনও টার্মিনাল না থাকায় ভোগান্তি বাড়ছে।
বেনাপোল বন্দরের উপ পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, “ভারতের পেট্রাপোল বন্দর হয়ে পণ্য আমদানি বাড়ার পাশাপাশি পণ্য রপ্তানিও বেড়েছে দ্বিগুণ। এখন প্রায় দেড় হাজার থেকে এক হাজার ৮০০টি পণ্য বোঝাই ট্রাক ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় বেনাপোল বন্দরে অবস্থান করছে। এতে বন্দর এলাকায় আমদানি-রপ্তানি পণ্য খালাস ব্যাহত হচ্ছে।”
তিনি জানান, রপ্তানি বাণিজ্য আরও গতিশীল করতে সম্প্রতি ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তারা প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দুই শতাধিক রপ্তানি পণ্যের ট্রাক নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
মতামত দিন