সরকারি এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আওতায় রয়েছে জেলার ১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দুটি মাদ্রাসা। সব মিলিয়ে ৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য ৫৬ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ফরিদপুর বিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র। তবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি এখন শুধু কাগজে-কলমে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই জানেন না এটির অস্তিত্বের কথা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফরিদপুর জেলা কারাগারের ঠিক উল্টো পাশে অবস্থান বিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের। ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি জনবহুল এলাকায় অবস্থিত। কিন্তু সেখানে গিয়ে কোনো রোগী পাওয়া যায়নি। সরকারি এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দুজন মেডিকেল অফিসারের মধ্যে রয়েছেন একজন। পাশাপাশি একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স ও একজন ফার্মাসিস্ট থাকলেও কোভিড মহামারিতে তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেষণে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া একজন এমএলএস রয়েছেন।
চলার পথে প্রতিষ্ঠানটি নজরে আসার কারণে এর সম্পর্কে জানেন শহরের গুটিকয়েক মানুষ। কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানেন না এর কাজ বা এখানে কী ধরনের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় সে সম্পর্কে।
ফরিদপুর শহরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরমান বলেন, “আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি আর ছেলে প্রথম শ্রেণির ছাত্র। আমি একজন অভিভাবক হিসেবে ফরিদপুর বিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নাম কখনও শুনিনি। এটা কোথায় অবস্থিত তাও জানি না।”
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আওতায় রয়েছে জেলার ১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দুটি মাদ্রাসা। সব মিলিয়ে ৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৭৮৬ জন।
এ বছরের আগস্ট মাসের কার্যক্রম প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটিতে চিকিৎসা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৪৯ জন। সে হিসেবে গড়ে প্রতিদিন সেবা নেন ১৫ জন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির ২৯টি কার্যক্রমের মধ্যে বেশিরভাগই শূন্য।
ফরিদপুর জিলা স্কুলের ৯ম শ্রেণির ছাত্র ইসমাইল হোসেন বলে, “শিক্ষক, সহপাঠী ও অভিভাবক কারও কাছ থেকেই এমন প্রতিষ্ঠানের কথা শুনিনি। আজই প্রথম জানতে পারলাম।”
গোয়ালচামট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিবেকানন্দ বসু ২০১৭ সালে অবসরে যান। তার বয়স এখন ৬৩ বছর। তিনি বলেন, “আমার সময়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির কার্যক্রম চালু ছিল। তবে খুব একটা বেশি না।”
জানতে চাইলে বিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নিবেদিতা দাস বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠানের সব কার্যক্রমই চালু রয়েছে। স্কুলে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের স্বাস্থ্যকেন্দ্র সম্পর্কে ধারণাও দেওয়া হয়। তবে শিক্ষক, অভিভাবকরা যদি আমাদের এখানে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা নিতে না পাঠান, তাহলে আমরা কী করতে পারি? এখন সবাই আধুনিক হাসপাতাল, ক্লিনিকমুখী। আমাদের এখানে সব থাকতেও সংশ্লিষ্টরা আসছেন না। অথচ আমরা তো তাদের সেবা দেওয়ার জন্য বসে থাকি।”
বিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ইশরাত জাহান ইলা বলেন, “আমাদের কার্যক্রম প্রতিদিনই চলমান থাকে। প্রতিমাসে আটটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করা হয়। তবে আমাদেরও কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। একটা অফিস চালানোর জন্য যা দরকার তা পর্যাপ্ত এখানে নেই। বিদ্যালয় পরিদর্শনের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই।”
মতামত দিন